নিয়ামতপুরে সরিষার হলুদের রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জন


নিয়ামতপুর প্রতিনিধি : 
মাঠ তো নয়, এ যেন হলুদ ফুলের চাদর বিছানো অবারিত প্রান্তর। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ৮টি  ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলদে ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠের পর মাঠ। মাঠের দিকে তাকালে দিগন্তজুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে।

গত বছর সরিষার ফলনও হয়েছে বাম্পার। গত বছরের চেয়ে উপজেলায় এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে সরিষা চাষের গড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ হাজার ২৯২ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। গত বছর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। ৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে ভাবিচা ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫ মে. টন।

এবারে বারি সরিষা-১৪,১৫,১৭ ও ১৮; বিনা সরিষা-৪,৯ ও ১১ এবং   টরী-৭ জাতের সরিষা বেশি আবাদ করা হয়েছে। ভাবিচা গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার বলেন, আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময়ে বিনা সেচে সরিষা চাষাবাদ হয়। সরিষা চাষে তেমন খরচ হয় না বলে এই আবাদে ঝুঁকছে কৃষকেরা। পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদা পূরণ হয় এবং উদ্বৃত্ত সরিষা বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা।

আর এই হলুদে হলুদে গুঞ্জন ছড়িয়েছে মৌমাছিরা। কারণ  সরিষা খেতের পাশেই মৌ-বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সুবিধা হচ্ছে। পরাগায়নের ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণ করা হচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষাচাষি ও মৌচাষি—দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছে।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে  জানা গেছে , চলতি বছর উপজেলায়  সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে ভাবিচা ইউনিয়নে। ফলে এ  ইউনিয়নের মাঠে মাঠে মৌচাষিদের আনাগোনাও বেশি। সরিষাখেতের পাশে মৌ-বাক্স বসিয়েছেন খামারিরা (মৌচাষিরা)। তাঁরা রাজশাহী, নড়াইল  জেলা থেকে এসেছেন। কেউ কেউ অন্যান্য এলাকা থেকে এসেছেন।

গত কয়েকদিন আগে  ভাবিচা ইউনিয়নের ডিমা, ভবানীপুর, কুমিরজোল ও শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের  হরিপুর মাঠে মৌচাষীদের মৌ বক্স স্থাপন করতে দেখা গেছে।

ডিমা মাঠে ১৭০টি  মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন মৌচাষি মোঃ দুলাল। তিনি রাজশাহীর কেশরহাট উপজেলা থেকে  এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।
মোঃ দুলাল বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে তিনি ওই মাঠে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৭০টি বাক্স থেকে দুইবার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে আড়াই  থেকে তিন কেজি মধু পাওয়া গেছে। তিনি জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত  থাকবেন।
উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের  হরিপুর মাঠে মৌ-বাক্স বসিয়েছেন মোঃ বোরহান উদ্দিন। তিনি এসেছেন নড়াইল জেলা থেকে। তার সঙ্গে আরও তিনজন মৌচাষি এসেছেন।  তিনি জানান, স্থানীয় এক কৃষকের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি মৌ বাক্স নিয়ে এখানে এসেছেন। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে তিন কেজি মধু পাওয়া যাবে। আর একটি বাক্স থেকে তিন থেকে পাঁচ বার মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি জানান।

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮২০ টি মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স থাকলে পরাগায়নে সুবিধা হয়। এতে করে সরিষার উৎপাদনও বেশি হবে। আর এভাবে মধু উৎপাদন করে মধুর চাহিদাও পূরণ করা যায়।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোনো আবহাওয়া ভালো রয়েছে। আশা করছি এবছরও সরিষার উৎপাদন  ভালো হবে।