নামের অপব্যবহারে ক্ষুব্ধ ডিজে শিল্পীরা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ডিজে মানে ডিস্ক জকি। আরও খুলে বললে, যে মানুষটি একটি ডিস্ক ও যন্ত্রের সমন্বয়ে বিভিন্ন গানের মেলবন্ধন ঘটান, মাঝে মাঝে নিজেও কণ্ঠ মেলান তাতে। দুনিয়ার সিংহভাগ দেশে আনন্দ-উৎসবের জন্য এই ডিজে শিল্পীদের রয়েছে বাড়তি কদর। যদিও বাংলাদেশে এই ডিজে শিল্পীদের পরিচিতি ও সামাজিক অবস্থান দিনকে দিন ঠেকছে তলানিতে। সমাজে, সোশাল হ্যান্ডেল ও সংবাদমাধ্যমে এই ঘরানার শিল্পীদের নিয়ে রয়েছে নেতিবাচক উপস্থাপনা।

যেমন ‘ডিজে পার্টিতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে’ অথবা কোনও অনুষ্ঠানে অনৈতিক কিছু হলেই বলা হয় সেটি ছিল ‘ডিজে পার্টি’! অথবা কোনও শিল্পীর নামের আগে ডিজে লেখা দেখলেই তাকে বিবেচনা করা হয় নেতিবাচকভাবে। মূলত এই বিষয়টিকে এবার নিজেরাই খানিক ভিন্ন উপায়ে সামনে তুলে আনলেন দেশের স্বনামধন্য বেশ ক’জন ডিজে শিল্পী। এরমধ্যে রয়েছেন ডিজে সনিকা, ডিজে মারুফ, ডিজে লিটন, ডিজে বাপ্পি, ডিজে তৃষা, ডিজে রবিন, ডিজে তনুসহ অনেকে।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেশের জনপ্রিয় এই ডিজে শিল্পীরা একযোগে সোশাল হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও বার্তা দেন। যাতে তারা প্রত্যেকেই ব্যাখ্যা করেন ডিজে শব্দের মানে এবং ডিজে শিল্পীদের কাজের পরিধি। কারণ, এই ডিজে শিল্পীরা মনে করেন, অনেকের অজ্ঞতা ও অসচেতনতা থেকেই ‘ডিজে’ শব্দটি ক্রমশ নেতিবাচক হয়ে উঠছে। যার ফলে এই ঘরানার শিল্পীদের জীবন ও কর্মক্ষেত্র চরম হুমকির মুখে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে তুমুল জনপ্রিয় গান ‘বাবু খাইছো’ গানের শিল্পী ডিজে মারুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিজে বা ডিস্ক জকি হলো প্রফেশনাল সংগীতাঙ্গনের একটি অংশ। অন্য আট-দশজন শিল্পী-মিউজিশিয়ানদের মতোই আমাদের কাজ। অথচ সংগীতের এই অংশটিকে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখে। কারণ, বেশিরভাগ অসামাজিক কর্মকাণ্ডের খবরের সঙ্গে ডিজে নামটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটার বিরুদ্ধে এবার আমরা লড়াই করছি। কারণ, আমি একটি কনসার্টে গান পরিবেশন করে তো কোনও অপরাধ করছি না। অথচ সেই অনুষ্ঠানে কোনও নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে বদনামটা আমাকে বহন করতে হচ্ছে! এমনকি সাধারণ কোনও অনুষ্ঠানেও মানুষ গান ছেড়ে নাচ করলেও ডিজে পার্টি বলে গালি দেওয়া হচ্ছে! এটা তো ঠিক নয়।’

আশির দশকের শেষ থেকে বাংলাদেশে স্বল্প পরিসরে ডিজে মিউজিক চালু হলেও সেটি জনপ্রিয়তা পেতে থাকে ৯০ দশকের শেষদিকে এসে। অনেক শিল্পী-মিউজিশিয়ান এই ডিজে প্রফেশনে ঝুঁকে পড়েন। অনেকে এটার ওপর দেশের বাইরে থেকেও পড়াশোনা করে আসেন। ২০ বছর পরেও সেই ডিজে শিল্পীরা নিজেদের সঠিক মূল্যায়ন ও পরিচিতির জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।

এমন হতাশা প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী ডিজে সনিকা বলেন, ‘‘বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম ও মিডিয়ায় প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তিদের নামের আগে ‘ডিজে’ শব্দটির ব্যবহার হচ্ছে! কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, বন্ধুবান্ধব বা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে গান বাজিয়ে নাচলে ‘ডিজে পার্টি’ বলে গালি দেওয়া হয়। এতে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রফেশনাল ডিজেরা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সমাজ ও পরিবার-পরিজনদের কাছে। ডিজে মানে ডিস্ক জকি। সে একজন সংগীতশিল্পীও। তার কাজ একটি শো’তে গিয়ে এক কোনায় দাঁড়িয়ে হেডফোন কানে নিয়ে মিউজিক করা। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ তার কাজ নয়। এই বিষয়টি সবাইকে বোঝানোর সময় এসে গেছে। সে জন্যই আমরা সোশাল হ্যান্ডেলে ভিডিও বার্তা দিচ্ছি। সামনে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’’

জানা গেছে, দেশে ডিজে শব্দটি এতটাই নেতিবাচক পর্যায়ে গেছে, এখন অধিকাংশ শোয়ের পোস্টারে বা প্রচারণায় ‘ডিজে পার্টি’ বা ‘ডিজে শো’ উল্লেখ করা হয় না।

ডিজে তৃষা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা আর এসব সহ্য করতে পারছি না। প্রায় ৩০ বছরের একটি শিল্পমাধ্যম এটি। অথচ আজও আমরা ট্রলড হচ্ছি। নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছি। সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছি নিয়মিত। এই মর্মে একাত্মবোধ প্রকাশ করে ইন্ডাস্ট্রির স্বনামধন্য এবং প্রতিষ্ঠিত ডিজেরা তাদের নিজ নিজ সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা একটি মৌন প্রতিবাদ। আমরা প্রতিবাদের শুরুটা করেছি শিক্ষা দিয়ে। বোঝাতে চাইছি, ডিজে মানে আসলে কী? মিউজিক সম্পর্কে না জেনেও ডিজেদের সম্মানহানি করছে যারা, তাদের জন্য আমাদের এই বার্তা।’

দেশের নামজাদা ডিজে শিল্পীরা জানান, তাদের পরিচিতি ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে জানান দিতে এবং ‘ডিজে’ শব্দটির অপব্যবহার রোধে এখন থেকে সম্মিলিতভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন