নাপায় ক্ষতিকর কিছু মেলেনি, পরিবারের ‘ফোনকল’ নিয়ে সন্দেহ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে জ্বরের ওষুধ খাওয়ার পর দুই শিশুর (সহোদর) মৃত্যু রহস্যের কূলকিনারা হয়নি গত ছয় দিনেও। ভিসেরা ও যে ওষুধ খেয়ে শিশুদের মৃত্যু হয় সেগুলোর পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে শিশুদের পরিবারের একজনের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড নিয়েও সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে। একটি ফোন নম্বর থেকে কার সঙ্গে কী কারণে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলা হতো সেটি জানার চেষ্টা চলছে।

পরিবারটি শোকাগ্রস্ত হওয়া এ বিষয়ে খুব একটা জোর দিয়ে এগোতে চাইছেন না তারা।

এদিকে এ ঘটনায় গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তবে প্রতিবেদন কী আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।

অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতে নাপা সিরাপ বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি। সোমবার রাতে সমিতির এক প্যাডে সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার পুনরায় নাপা বিক্রির অনুরোধ করেন। ঔষধ প্রশাসনের পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট দোকান থেকে সংগ্রহ করা নাপাতে কোনো ধরনের ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করায় এবং সংশ্লিষ্ট কম্পানি এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ায় বিক্রির অনুরোধের কথা উল্লেখ করা হয়। এর আগে তিনি নাপা সিরাপ বিক্রি না করতে অনুরোধ জানান।

সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি কিংবা চিকিৎসকের কোনো অবহেলা ছিল কি না, সেটি তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সুজন খানের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। সুজন খান অনেকটা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও সহজ-সরল প্রকৃতির। তিনি কাজ করতেন ইটভাটায় ও তার স্ত্রী লিমা কাজ করতেন একটি কুড়ার মিলে।

পরিবারের লোকজন জানান, জ্বরের জন্য আনা ওষুধ খাওয়ার পর বমি করে ওই দুই শিশু। প্রথমে আশুগঞ্জ ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে তাদেরকে আনা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শমতো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে একজন, পরে বাড়িতে আরেকজন মারা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গঠনের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ইতিমধ্যে কমিটি হাসপাতালে এসে তদন্ত করে গেছে। সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করেছিল, সেটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ‘

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন মঙ্গলবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ’ তদন্তে রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ, কারো গাফিলতি কিংবা কোনো ধরনের সুপারিশ আছে কি না সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

ওই দুই শিশুর মা লিমা বেগম শুরু থেকেই অভিযোগ করছিলেন, নাপা সিরাপ খাওয়ানোর পর অসুস্থ হয়ে যাওয়া দুই শিশুকে প্রথমে আশুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ভালো করে না দেখেই দুই শিশুর শারীরিক অবস্থা ভালো আছে জানিয়ে তাদরকে বাড়িতে নিয়ে বেশি করে পানি ও টক জাতীয় খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। পরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে এক শিশু এবং বাড়িতে নেওয়ার পর আরেক শিশুর মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর থেকেই ওষুধ আনা স্থানীয় ‘মা ফার্মেসি’র মালিক পরিবারসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা কোথায় আছেন সে বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ওষুধের দোকানটি ইতিমধ্যে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ওই ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করা একই ব্যাচের আটটি সিরাপের ক্ষতিকারক কিছু মেলেনি বলে সোমবার জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ। সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘ওষুধের গুণগত মান ঠিক ছিল। সবগুলো পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ এসেছে। সারা দেশ থেকেও নাপা এনে পরীক্ষা করা হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ