নাটোরে পুলিশের সহযোগিতায় মেলার নামে চলছে রমরমা জুয়ার আসর

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
নাটোরের সিংড়ায় বৈশাখী সহ বিভিন্ন নামে বেনামে মেলার নামে চলছে রমরমা জুয়ার আসর। মেলায় জুয়ার আসরের পাশপাশি চলছে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি এবং অবৈধ লটারিসহ অসামাজিক কার্যকলাপ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ গ্রামের প্রভাবশালীরাই এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে, সিংড়া থানা পুলিশের প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় জুয়ার রমরমা আসর চলছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ব্যক্তি। এছাড়া জুয়ার টাকা আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশের গোয়ান্দা সংস্থা ডিটেকটিভ স্পেশাল ব্রাঞ্চ (ডিএসবি) সিংড়া থানায় কর্মরত বাবুল হোসেনকে। প্রতিটি মেলায় তার সহযোগিতায় জুয়ার আসর চলে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে এলাকাবাসীরা বলছে, রমজান মাসে বিভিন্ন নামে-বেনামে মেলা বসিয়ে রমরমা জুয়ার আসর চলছে। এতে এলাকার উঠতি বয়সি ছেলেরা সহ সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। অবিলম্বে জুয়ার আসর সহ সকল কর্মকান্ড বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
সূত্র জানা যায়, সিংড়া উপজেলার ১নং শুকাস ইউনিয়নের কলিয়া বাজারে প্রতি বছরের ন্যায় গত রোববার (২৮ মে) আয়োজন করা হয় মাদার-নিশানের মেলা। এলাকার নিয়ম অনুয়ায়ী পরের দিন সেই একই স্থানে বসে জামাই-বউ মেলা। কিন্তু রোববার রাত থেকেই শুকাস ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য সাইফুল ইসলাম ভোটা ও স্থানীয় জুয়ারু জয়নাল আবেদীন এর নেতৃত্বে মেলার নামে চলছে রমরমা জুয়ার আসর। মেলায় ডাবু, চরকি, বউ মাছ, ব্যাঙ টিকটিকি, তিন তাস, ফিতা খেলা, লটারিসহ সাত থেকে আট ধরনের জুয়ার আসর বসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট মেলা কমিটি ও জুয়ারুরা। ২দিন ব্যাপি মেলা চলার কথা থাকলেও ৭দিন ব্যাপি মেলা চলার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় মেলা কমিটির লোকজন। আর জামাই-বউ মেলা তো নয় যেন জমজমাট জুয়ার আসর। ঠিক একই ভাবে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। সেখানে জুয়ার বড় বড় ৮টি বোর্ডে খেলা চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার। মেলাকে ঘিরে পাশেই চলছে গাঁজা সেবন।


সূত্রটি আরো জানায়, প্রতিদিন ২৫হাজার টাকার বিনিময়ে কলিয়া বাজারে জুয়ার আসর বসানোর অনুমতি দেয় সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। ওই চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেলে মেলা থেকে ২৫হাজার টাকা তুলে ওসিকে দেন ডিএসবির বাবুল হোসেন।
সূত্রটি আরো জানায়, সম্প্রতি শুকাশ ইউনিয়নের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে মেলার নামে চলে জুয়ার আসর। আর এসকল মেলায় সিংড়া থানায় নিয়োজিত ডিএসবি পুলিশ বাবুল হোসেন কে রাতভর জুয়ার আসরে জুয়ারুদের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। জুয়ারুরা গোপনে ডেকে নিয়ে কথা বলার ভঙ্গিতেই বুঝা যায় যেন থানা পুলিশকে মানেজ করেই চলছে এসকল কার্যকলাপ।
এছাড়া গত  মে সিংড়া উপজেলার বরবড়িয়া মেলায় ডিএসবির বাবুল হোসেনের সামনে চলে রমরমা জুয়ার আসর। এসময় তিনি বাধাও দেননি। পরে ওই মেলায় স্থানীয় সাংবাদিকরা জুয়া খেলার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে জুয়া খেলা বন্ধ করে দেন ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুকাশ ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, মেলাটি মাদারের মেলা নামে এলাকায় পরিচিত। তবে একে জামাই-বউ মেলা বলে অনেকেই। জুয়া খেলার বিষয়ে তারা বলেন আমাদের কি বা করার আছে? পুলিশ প্রশাসন তো সবই জানে। তবে রমজান মাসে এসব কার্যকলাপ বন্ধ হওয়া খুই জরুরী।


শুকাশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ওই মেলায় জুয়ার আয়োজন করা হচ্ছে লোক মুখে শুনে তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে সিংড়া থানাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে রাতে জুয়া চলেছে শুনে তিনি বলেন, তাঁর অজান্তে জুয়া চলে থাকতে পারে। এখন তো রমজান মাস নামাজের কারণে রাতের খবর তাঁর জানা নেই।
প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় মেলায় জুয়ার আসর চলার বিষয়ে সিংড়া থানায় কর্মরত ডিএসবি পুলিশের কন্সটেবল বাবুল হোসেন বলেন, তাঁর প্রয়োজনে তিনি মেলায় যাতায়াত করেন। প্রতিদিন মেলায় দেখা গেলেও তিনি জুয়ার সাথে সম্পৃত্ততা নেই। তাছাড়া সব জায়গায় যাওয়া বিষয়ে তার অধিকার রয়েছে। মেলা থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ ক্ষুদ্র হয়ে তার নামে এই রকম অভিযোগ করতে পারে।
এবিষয়ে জানতে সিংড়া থানায় এই প্রতিবেদক উপস্থিত হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাঝে মধ্যে শুকাশের কিছু এলাকায় জুয়ার আসর চলে। আজ থেকে আর কোন জুয়ার আসর চলবে না।
তিনি আরো বলেন, শুকাশ ইউনিয়ন সীমান্তবর্তী হওয়ায় জুয়ার আসর ভেঙ্গে দেওয়ার পর আবারো জুয়া খেলা শুরু করে তারা।
পুলিশ কে ম্যানেজ করে জুয়ার আসর চলছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ কে ম্যানেজ করে জুয়া চলছে না। কেই আড়ালে জুয়ার আসর চালাতে পারে। তবে খবর পাওয়ার পর সে বিষয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জুয়ার বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, জুয়ার আসর চলছে এমন খবর তিনিও শুনেছেন। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গিয়ে জুয়ার আসর বন্ধ করে আসবে।

স/অ