নবীজী (সা.) যেভাবে ভুল সংশোধন করে দিতেন

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন এক বেদুইন দাঁড়িয়ে মসজিদে প্রস্রাব শুরু করল। উপস্থিত লোকজন দেখে তাকে বাধা দিতে যাচ্ছিল।

কিন্তু প্রিয় নবী (সা.) তাদের বললেন, ওকে ছেড়ে দাও। ওর প্রস্রাব শেষ হলে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ো।

নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো, তোমাদের সহজ ও বিনয়ী আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোরতা বা উগ্রতার জন্য পাঠানো হয়নি। (বোখারি শরিফ: ২২০)

উপরোক্ত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। প্রস্রাবরত বেদুইনকে প্রস্রাবে বাধা দেয়া অথবা তাকে তার কাজ করতে দেয়া।

যদি তাকে থামিয়ে দেয়া হতো, তাহলে প্রস্রাব আটকে রাখায় তার শারীরিক ক্ষতি হতো। উপরন্তু এতে মসজিদের আরও বেশি জায়গাজুড়ে নাপাকি ছড়িয়ে পড়তে পারত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দূরদৃষ্টি দ্বারা এই বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছিলেন, তাই তিনি উপস্থিত সাহাবীদের তাকে বাধা দিতে বারণ করেছিলেন। ফলে লোকটিও স্বস্তিতে তার ‘কাজ’ শেষ করতে পারল ও নাপাকিও ছড়িয়ে পড়ল না। আর লোকটি প্রস্রাব শেষ করার পর নাপাকিযুক্ত স্থানটি শনাক্ত করে পানি ঢেলে সহজেই নাপাকি দূর করা গেল।

আর প্রস্রাব শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বেদুইন লোকটিকে ডেকে শান্তভাবে বুঝিয়ে বললেন, দেখ! মসজিদে প্রস্রাব অথবা পায়খানা করা যায় না। মসজিদ আল্লাহতায়ালার ইবাদাতের জায়গা। এখানে সালাত আদায় করা হয়, কোরআন তিলাওয়াত করা হয় ও আল্লাহর জিকির করা হয়।

ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) তার লেখা বোখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেছেন, উপরোক্ত হাদিস থেকে বেশ কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমন-

* অজ্ঞতাবশত কেউ কোনো ভুল করলে, তাকে সেই ভুলের জন্য তিরস্কার না করে বরং বুঝিয়ে বলা উচিত। তার ভুলের কারণটি তাকে ব্যাখ্যা করা উচিত।

* ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিরস্কার না করে ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলাই মহত্ত্ব।

ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাবুক অভিযানের সময় এক লোক রাসুলুল্লাহ সা.-এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল, আমি আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকদের চেয়ে অধিক খাদ্যলোভী, মিথ্যাবাদী ও কাপুরুষ আর কাউকে দেখিনি।

আওফ বিন মালিক (রা.) ওই লোককে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি তো মুনাফিক হয়ে গেছ। আমি এখনই রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে গিয়ে সব বলে দিচ্ছি।

আওফ (রা.) রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে গিয়ে দেখলেন, ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে এ ব্যাপারে ওহী নাজিল হয়েছে, আর ওই লোকটিও রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে হাজির হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো সফরে সময় কাটানোর জন্য মজা করছিলাম।

ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমার কাছে মনে হল যেন লোকটি রাসুলুল্লাহ সা.-এর উটের লাগামের সঙ্গে ঝুলে ছিল আর তার পায়ে প্রস্ত্ররাঘাত করা হচ্ছিল। এবং সঙ্গে সঙ্গে লোকটি বলছিল, আমরা সফরে সময় কাটানোর জন্য মজা করছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সা. নিম্নের আয়াতটি তিলাওয়াত করছিলেন,

অর্থাৎ ‘(হে নবী আপনি) বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলে?’ (সুরা তাওবা: ৬৫)

এখান থেকে বোঝা গেল, এহেন ঘৃণ্য অপবাদের প্রতিবাদও রাসুলুল্লাহ সা. কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে করেছিলেন। এতে করে ওই লোকটি বুঝতে পেরেছিল যে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সা. ঠাট্টা-বিদ্রূপের অনেক ঊর্ধ্বে।

অথচ সেখানে রাসুলুল্লাহ সা.-এর জায়গায় অন্য কেউ হলে সংশ্লিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠিনতম প্রতিশোধ নিতেও দ্বিধাবোধ করত না।

রাসুলুল্লাহ সা. ভুল শোধরাতে গিয়ে ভুলকারীর সঙ্গে কখনোই অশোভন আচরণ করতেন না; বরং নম্রভাবে তাকে বুঝিয়ে দিতেন। এতে করে ভুলকারী প্রকৃতপক্ষেই লজ্জিত হতো, আর ভবিষ্যতে একই ভুল দ্বিতীয়বার আর করত না।

 

সুত্রঃ যুগান্তর