নন্দীগ্রামে উদ্বোধনের ১৪ বছরেও চালু হয়নি হাসপাতাল

বগুড়ার নন্দীগ্রামে ২০ শয্যা হাসপাতাল শুধু নামেই রয়েছে। ওটিসহ মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম ১৪ বছর আগে উদ্বোধনের সময় যেভাবে আনা হয়েছিল এখনো সেভাবেই রয়েছে। ধুলাবালির স্তুপ পড়েছে সেগুলোর ওপর। নেই কোনো নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নিয়োগপ্রাপ্ত একজন মেডিক্যাল অফিসার, ফার্মাসিষ্ট ও উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে হাসপাতালটির বহিঃবিভাগ।

হাসপাতালটি নির্মাণে সরকারের সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশী খরচ হলেও চালু না হওয়ায় তা এলাকাবাসির কোন কাজে আসছে না। ব্যবহার না করায় হাসপাতালের বিছানা ও আসবাবপত্রে ধুলাবালির আস্তরণ জমেছে। ঘুনপোঁকা ভবনের দরজা-জানালায় বাসা বাঁধায় খুলে পড়ছে দরজা জানালার কপাট। ঠিকমতো নজরদারি না থাকায় হাসপাতালটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে এলাকাবাসির সাথে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দুরে বিজরুল বাজারে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশেপাশের বিপুল সংখ্যাক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং শিশুরা বিভিন্ন টিকাদান কর্মসূচির বাইরে থেকে যাচ্ছিল। এ কারণে উপজেলা সদরে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মানের দাবি তোলেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে উপজেলা সদরে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে (নির্মাণ ও রক্ষাবেক্ষন ইউনিট-সিএমএমইউ) হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ সহ আনুসাঙ্গিক খাতে ব্যায় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান হাসপাতালটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন এবং নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

২০০৫ সালে এর অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আটকে যায়। জনবল নিয়োগ ছাড়াই ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহুর্তে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন সাংসদ ডা: জিয়াউল হক মোল্লা। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছরেও জনবলের অভাবে হাসপাতালটি আর চালু হয়নি। ফলে হাসপাতালের বিশাল ক্যাম্পাস জুড়ে ঘাস ও বিভিন্ন গাছ-জঙ্গল গজিয়েছে। আবাসিক ভবনগুলো নষ্ঠ হতে চলেছে।

রবিবার সকালে সরেজমিনে নন্দীগ্রাম ২০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক ও ষ্টোর রুম ছাড়া সব কক্ষে তালা ঝুলছে। হাসপাতালের একটি কক্ষে চলছে বর্হিঃ বিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।

উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার উম্মে হাসনা বানু জানান, ‘প্রতিদিন এখানে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া রোগীদের কোনো সেবা দেওয়া যায় না।’

চিকিৎসা নিতে আসা পৌরসভার দামগাড়া গ্রামের শেফালি বেগম বলেন, ‘গরীব মানুষ টেকার অভাবে বগুড়া যাবার পারিচ্চি না। ঔষধ কিনবার পারিচ্চি না। হার্টেও অসুখ লিয়ে এটি অ্যানো, সাদা সাদা বড়ি ছাড়া কিছুই দিল না’।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা : তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, ‘জনবলের অভাবে ওই হাসপাতালটি পূনাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

জানতে চাইলে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের বিএনপির সাংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ২০ শয্যার হাসপাতালটি চালু করার বিষয়ে সংসদে কথা বলেছি। ইতোমধ্যেই একটি নিরিক্ষা কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন তৈরি করছে। অচিরেই সেই প্রতিবেদনের আলোকে তারা হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ