নওগাঁয় স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ: 
নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় আব্দুল লতিফ (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাত ২টার দিকে উকিলপাড়া গাঁজামহালের গোডাউন সংলগ্ন একটি বাড়ির বারান্দায় গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় মেয়ে লাবনী আক্তার আব্দুল লতিফের দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমী আক্তারকে (৩৫) সহ অজ্ঞাত তিন-চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। পরে মৌসুমীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত আব্দুল লতিফ নওগাঁ শহরের পুরাতন মাছ বাজার এলাকায় মেসার্স ইত্যাদি সিরামিকস নামের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি জেলার পত্নীতলা উপজেলার শিয়াড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। ছয়-সাত বছর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে নওগাঁ শহরে বসবাস করছিলেন। তিনি তাঁর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নওগাঁ পৌরসভার মাষ্টারপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমী আক্তার পৌরসভার উকিলপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
মামলার এজহার ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে বদলগাছী উপজেলা সদরের ইয়াসিন আলীর মেয়ে মৌসুমী আক্তারের সঙ্গে লতিফের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁরা দুজনে নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই দুজনের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মৌসুমী আক্তার দেন মোহরের ৪ লাখ টাকা দিয়ে তাঁকে তালাক দেওয়ার জন্য  স্বামী লতিফকে চাপ দিতে শুরু করেন। দেন মোহরের টাকা না দিলে নারী নির্যাতনের মামলা করবেন বলেও একাধিকবার তাঁর স্বামীকে হুমকি দেন তিনি। এ নিয়ে গত রোববার দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এতে লতিফের গাল ও ঠোট কেটে যায়। এ ঘটনার পর গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মৌসুমী তাঁর স্বামীকে ফোন করে তাঁর উকিলপাড়ার ভাড়া বাড়িতে ডেকে নেয়। রাতে লতিফের স্ত্রী ও তাঁর সহযোগীরা মিলে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পরে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বাড়ির বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নওগাঁ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম নজমুল হক অভিযোগ করে বলেন, মৌসুমী এর আগেও তিন-চারটি বিয়ে করেছিলেন। তিন একজন প্রতারক ধরণের মেয়ে। বিয়ের সময় বড় অংকের দেন মোহর বাধেন। পরে নানা ছুঁতোয় স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে দেন মোহরের টাকা হাতিয়ে নেয়। নওগাঁ শহরেই তিনি আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন। নারী নির্যাতনের মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকেও মোটা অংকের দেন মোহরের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নওগাঁর সদর থানার পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে। গলায় ছাড়া লাশের দেহে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নওগাঁ সদর হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে- এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, আসামি মৌসুমী আক্তার একজন প্রতারক চক্রের সদস্য। মোটা অংকের দেন মোহরের শর্তে বিয়ে করার পর নারী নির্যাতনের মামলার ভয় দেখিয়ে দেন মোহরের টাকা উদ্ধার করাই তাঁর কাজ।
স/শা