নওগাঁর মান্দায় বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর মান্দায় মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকার রোপণকৃত বোরো ধান। ক্ষতির মুখে পড়েছে আলু, পেঁয়াজ, সরিষাসহ রবিশস্যের খেতগুলো। এদিকে আকস্মিক বৃষ্টির পানিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ইটভাটা মালিকদের।

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে লঘুচাপের কারণে বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২ টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুক্রবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। জেলার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার।

বেশ কয়েক জন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে , হঠাৎ করে বৃষ্টিতে নিচু এলাকার সদ্য রোপনকৃত বোরো ধানের চারা তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে অনেক বীজতলাও। বদ্ধ পানি সরে না গেলে রোপনকৃত জমির চারা পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে নতুন করে ওইসব জমিতে আবারো চারা নতুনভাবে রোপন করতে হবে। এতে চারার সংকট দেখা দিবে। চারা না পেলে নষ্ট হওয়া জমিতে দ্বিতীয়বার ধান রোপন করা সম্ভব হবে না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

উপজেলার পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক মনসুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে তার ৪০ কেজির ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। পানি সরে না গেলে বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে চারার সংকট সৃষ্টি হতে পারে। একই সাথে তার রোপনকৃত দুই বিঘা জমির ধানও তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে।

চলতি মওসুমে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন উপজেলার নলতৈড় গ্রামের কৃষক আবুল কালাম। তিনি বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে তার পেঁয়াজের জমিগুলোতে পানি আটকে রয়েছে। পানি সরে না গেছে পেঁয়াজের চারা পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তিনি।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকার রবিশস্যের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কপি, আলু, পেঁয়াজ, সরিষাসহ নানা ধরণের সবজির খেতে পানি থইথই করছে। চড়া দামে সার ও বীজ কিনে তারা চাষবাদ করেছেন। কিন্তু শীতকালের হঠাৎ বৃষ্টি তাদের মধ্যে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘যেহেতু বৃষ্টি থেমে গেছে। শনিবারে রোদের দেখা মিলেছে। সেহেতু রবিশস্যের খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কৃষকদের জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য সুপরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বোরো ধানের মাঠে যেখানে পানি জমেছে সেগুলোতে ছত্রাক দেখা দিতে পারে। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়ে গেলে কোন রকম সমস্যা থাকবে না।’

বদলগাছী আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুর রহমান জানান, সাগরে লঘুচাপের কারণে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার সারাদিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৪৪ মিলিমিটার।

অপরদিকে ইটভাটার মালিকেরা জানান, অসময়ের হঠাৎ বৃষ্টিতে ভাটার খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট গলে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন ভাঁটা মালিকেরা।

এমএনটি ও শাপলা হাওয়া ভাটামালিক মামুন অর রশিদ ও শহিদুল ইসলাম বলেন, মাঘ মাসের শুরুতে এর আগে একদফা বৃষ্টিতে তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবারের বৃষ্টিতে রোদে শুকাতে দেয়া কাঁচা ইটগুলো আবারো বৃষ্টির পানিতে গলে ও ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এবারও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

জি/আর