নওগাঁর মান্দায় পাকুড়িয়া গণহত্যা দিবস পালিত

নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর মান্দায় প্রতি বছরের মতো এবারও পাকুড়িয়া গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার বেলা ১১টায় উপজেলার পাকুড়িয়ায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী ও পাকুড়িয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক এমপি।

 
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান খান, মান্দা উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আলহাজ্ব মোল্লা এমদাদুল হক, সহ-সভাপতি এসএম ব্রুহানী সুলতান মাহমুদ গামা, শেখ আব্দুল লতিফ, সাধারণ সম্পাদক স.ম জসিম উদ্দিন, মান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মকলেছুর রহমান মকে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. ইকরামূল বারী টিপু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম চৌধূরী প্রমূখ।

 

আরও উপস্থিত ছিলেন, জাপা সভাপতি আলতাফ হোসেন,যুবদল সভাপতি মিজানুর রহমান নান্টু, সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল, সেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক নওশাদ আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বীরমুক্তি যোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, প্রসাশনের কর্মকর্তা, থানা প্রসাশন, সাংবাদিকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে পৈশাচিক গণহত্যার শিকার হন ১২৭জন নীরিহ মানুষ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে যখন সারাদেশের মানুষ পাকিস্থানী স্বৈর-শাসকদের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন দেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দূর্বার বেগে জেগে ওঠে নিজের জীবন বাজী রেখে দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির স্বপ্নে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

 

সে সময় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় নওগাঁর সদর উপজেলার নিচ পাকুড়িয়া গ্রামে অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা নিলেও জায়গার নামের সাথে মিল থাকায় ঠিকানা ভুল করে সাঁজোয়াযানে করে এসে পড়েন তৎকালীন রাজশাহী জেলার নওগাঁ মহকুমার মান্দা থানার প্রত্যন্ত পল্লী গ্রাম পাকুড়িয়ায়। ফলে শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষের উপর দূর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্থানী বাহিনীর হাতে নির্মম গণহত্যার শিকার হয়ে ১২৭জন তরতাজা মানুষের প্রাণের বিনিময়ে পাকুড়িয়া গ্রামটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়।

 
বর্তমানে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা সদর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে পাকুড়িয়া গ্রামে ২৮ আগষ্ট সকালে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে স্থানীয় জনসাধারণকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে মিথ্যা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে একত্রিত করে বর্তমান পাকুড়িয়া ইউনাইটেড স্কুল মাঠে জড়ো করেন। এরপর সেখানে জড় করা ১২৮ পরিবারের ১৪৬ জনকে এক লাইনে দাঁড় করে দফায় দফায় মেশিনগানের গুলি চালিয়ে নিরাপরাধ স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

 

এ সময় হানাদার শত্র“রা মিলিটারী বাহিনীর সদস্যরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে নির্মমভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। তবে এ সময় বুদ্ধি বলে মাত্র ১৯ জন মানুষ জীবন বাঁচাতে গায়ে রক্ত মেখে নি:শ্বাস চেপে রেখে মৃত্যুর ভান করে ভাগ্যবলে বেঁচে যান। পরে কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যান আহতদের মধ্যে অনেকেই।

 

সেই দিন পাকুড়িয়া গ্রামটি বিধবাদের গ্রামে পরিণত হয়েছিল। যারা শরীরে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন তারাসহ সেই সময়কার স্থানীয় লোকজন এখনো সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে করে শিউরে উঠেন।

 

এখনও হারানো স্বজনদের কথা মনে করে সেই দিনের ভয়াবহতার কথা মনে হলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন ২৮ আগস্ট যুদ্ধাহত মমতাজ উদ্দিন, সাবেদ আলী মোল্লাসহ বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো ও তার পরিবারের লোকজন। এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম নির্মম পৈশাচিক গণহত্যা।

স/শ