নওগাঁয় অনাবৃষ্টিতে ঝরছে আমকোড়ালি

নওগাঁ প্রতিনিধি 

বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয় টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপদাহ বিরাজ করছে। ফলে প্রচন্ড গরম ও অনাবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আকাশে মেঘের কোনো ছিটেফোটা দেখা মিলছে না। ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। প্রচন্ড রোদের কারণে মাটির রস শুকিয়ে গেছে। বাগানে সেচ দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আমকোড়ালি।

নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের তথ্যমতে, জেলায় গত কয়েক দিন সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। অনাবৃষ্টির ফলে প্রচন্ড খরায় রস শুকিয়ে বোটা থেকে ঝরে পড়ছে আম। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ৫২৫ হেক্টর জমিতে বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসেবে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।

উপজেলা ভিত্তিক সদর উপজেলা ৫১০ হেক্টর, রানীনগর ১৩০, আত্রাই ১২০, বদলগাছী ৫৩০, মহাদেবপুর ৬৩০, পত্মীতলায় ৫ হাজার ৮১৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, মান্দায় ৪০০, পোরশায় ১০ হাজার ৫৫০, সাপাহারে ৯ হাজার ২৫৫ এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় এক হাজার ৩৮৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্মীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার আংশিক এলাকায় একসময় বৃষ্টি নির্ভর একটিমাত্র ফসল আমন ধান হতো। তবে এখন ধান ছেড়ে মানুষ আম বাগানে ঝুঁকছেন। এ মৌসুমে খরায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আম বাগানে সেচ দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বোটার রস শুকিয়ে আম ঝরে পড়ছে।

সাপাহার উপজেলার তিলনা গ্রামের উদ্যোক্তা মো. নোমান বলেন, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে আম্রপালি, বারি-৪ ও ল্যাংড়া জাতের বাগান করেছি। যেখানে চার বিঘার বাগান ইজারা নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রতি বিঘাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার করে। আম পাড়া পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে। অনাবৃষ্টিতে আম ঝরে পড়ছে। পানির সংকট থাকায় বাগানে পানিও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঝরে পড়ছে। এভাবে আম ঝরে পড়লে লোকসান গুনতে হবে।

পোরশা সরাইগাছী গ্রামের আম চাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, ৫০ বিঘা আম বাগান ইজারা নিয়েছি। যেখানে খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, বারি-৪ ও আম্রপালি আছে। প্রচন্ড বোটা থেকে আম ঝরে পড়ছে। বেশি সমস্যা ল্যাংড়া ও আম্রপালিতে। এলাকায় পানির ব্যবস্থা নেই। পুকুরে যা পানি ছিল শুকিয়ে গেছে। আর এক মাস পর গোপাল ভোগ আম পাড়া শুরু হবে। তার ১০ দিন পর খিরসাপাত পাড়া হবে। কিন্তু যে হারে আম ঝরে যাচ্ছে তাতে লোকসান গুনতে হবে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় এবছর ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। শুরুতে গাছে ভালো মুকুল ছিল। কিন্তু তাপদাহের কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। গুটি রক্ষায় চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। যদি সেচ দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে গাছে স্প্রে করতে হবে। ৩-৫ বছর বয়সি গাছের গোড়ায় ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। এছাড়াও গাছের গোড়ায় খড়কুটা বা আর্বজনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে।