ধান সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কৃষকদের কাছ থেকে দ্রুত ও সরাসরি ধান সংগ্রহ করতে এবং বাজার মনিটরিংয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

খাদ্যপণ্যের সরবরাহ কম দেখিয়ে কেউ যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে সেটা কঠোরভাবে মনিটর করতে এবং বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া নানা বিষয়ে ডিসিদের কঠোর নজরদারি ও সহায়তা চেয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা। সংবিধান ও বিদ্যমান আইন মেনে ডিসিদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাঁচটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে সকাল পৌনে ৯টা থেকে শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিসি সম্মেলন চলে। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, নৌ-পরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শিল্প, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

এসব অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন শেষে বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিসিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় : খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এবার চার লাখ টন ধান কেনা হবে। সোমবার পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। এতে ডিসিরা সাহায্য করছেন। সেটা আরও জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডিসিরা যাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাঠে নামিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে পারেন সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিসি সম্মেলনে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কর্ম-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষ যাতে ভেজালমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য ডিসিদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বন্যায় খাদ্য সংকটের বিষয়ে সাধন চন্দ্র বলেন, খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ত্রাণও পর্যাপ্ত মজুদ আছে। যে কোনো অবস্থা মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার পর্যন্ত ২০টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রতিটি জেলায় এ পর্যন্ত ৭০০ মেট্রিক টন চাল, ১১ আইটেমের চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।

নৌ-পরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় : বন্যাকবলিত এলাকায় এমপি ও ডিসিদের প্রতিনিধি দিয়ে কমিটি করে কাজ করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে বন্যা মোকাবেলা করব।

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতে আমরা কাজ করছি। পানি কমে গেলে বাঁধ সংস্কার করা হবে। ফেনীতে পানি কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ সময় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য, শিল্প, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, খাদ্যপণ্যের সরবরাহ কম দেখিয়ে কেউ যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে সে বিষয়টি তদারকি করতে ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত যাতে সারা বছর কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ ভারত থেকে এবং আদা ও রসুন চীন থেকে আমদানি করা হয়। এ দুই দেশে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসবের দাম কমবে।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা সরানো হবে। এ বিষয়ে ডিসিদের কড়া নজরদারি করার কথা বলা হয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী আছে, বস্ত্র মিলসহ অনেক শিল্পকারখানা আছে।

পরিকল্পিত শিল্পে অবশ্যই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, পাকিস্তান আমলে সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন শাসক। কিন্তু বর্তমানে তাদের পরিচয় সেবা প্রদানকারী। বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) বলেন, পাটমোড়ক আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করার জন্য ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে আবারও সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে রূপান্তর করে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

তাই ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ সুষ্ঠুভাবে শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সতর্ক মনিটরিং করতে হবে।

বস্ত্র খাতে কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতন দেয়া হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক কারণে পাট শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়। তাদের আন্দোলন সফল হয়নি। প্রকৃত শ্রমিকরা আন্দোলন করতে চায় না। বস্ত্র খাতে যা যা করা দরকার, সরকার তার সবই করছে।’