গাছের সঙ্গে পরিচয় নেই মানুষের, বৃক্ষ মেলায় দর্শনার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গাছকে গাছ বলে চেনে অনেকেই। তবে নাম জানে ক’জনে। নাম না জানা মানুষের সংখ্যাই বেশি। গাছ পরিবেশের বন্ধু, গাছ ওষুধ তৈরির উপাদান- এ কথগুলো সবাই জানে। বাস্তব অর্থে গাছের মূল্যায়ন নেই। যদি মূল্যায়ন থাকতো তাহলে হয়তো জানা থাকতো গাছ সমন্ধে।

নগর ভবনের গ্রিনপ্লাজায় অনুষ্ঠিত বৃক্ষ মেলায় রাজশাহী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মীম, মাসুদা ও বৈশাখী নিজের মধ্যে গাছের নাম নিয়ে কথা বলাবলি করছিল। তারা কেউ মাত্র কয়েকটি ছাড়া গাছের নাম জানে না। আম, জাম, কাঁঠাল ছাড়া চেনে না গাছ। তারা বৃক্ষ মেলায় এসেছে গাছ কিনতে নয়Ñ গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে। মেলার স্টলগুলো ঘুরে তারা জানান, ‘আমরা কখনো ভাবিনি যে আমাদের দেশে এতো প্রজাতির গাছ রয়েছে। টেলিভিশনে দেখেছি কিছু ফলজ ও ওষুধের গাছের কথা। কখনো এমন মেলায় আসার সুযোগ হয়নি।’

নগর ভবনের গ্রীণপ্লাজা চত্বরে আয়োজিত বৃক্ষ মেলায় গাছ দেখছেন তরুণীরা।

তারা জানায়, ‘লেখা-পড়ার মাধ্যেমে শিখেছি কিছু গাছের নাম। বই এর বাইরেও অনেক গাছ ও নাম রয়েছে। স্কুল-কলেজ শেষে প্রাইভেট, প্রাইভেট শেষে বাড়ি। এ ভাবেই কেটেছে বছরের পর বছর। পরিবার থেকেও কখনো এমন বৃক্ষ মেলায় নিয়ে আসেনি। আসলে আজ অনেক অজানা গাছের সঙ্গে পরিচিত হলাম।’
জানা গেছে, নগর ভবনের প্রায় ১৮০ প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ নিয়ে বসেছে বৃক্ষ মেলা। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহারের গাছ। রয়েছে ঘর-বাড়ি সাজ সজ্জার গাছও। জানা-অজানা বৃক্ষের সম্ভারে সাজানো হয়েছে মেলার স্টলগুলো। ব্যস্ত শহরের সবুজের মেলা।

স্টলগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে, চেরি ও মাল্টা গাছ- বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, বারিফল আড়াইশ’ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। কাগজি লেবু ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, বাতাবি লেবু ৬০০ টাকা, ভেরিকেট পেয়ারা ৪০০ টাকা, চায়না কমলা ৪০০ টাকা, আমড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, লাল কাঁঠাল ৫০০ টাকা, সাধারণ কাঁঠাল ৫০ টাকা, নাসপাতি ৫৫০ টাকা, আপেল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আঙ্গুর ৫০ থেকে ২০০ টাকা, ডালিম ১৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, বাতাবি লেবু ৭০০ টাকা, বেল গাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ৬ থেকে ৭ বছরের বনসাই কামিনী ২ হাজার টাকা। বিক্রি হচ্ছে মিনি গেটার ৩০ টাকা দরে।

মেলায় রয়েছে, বহেরা, তেজপাতা, মিষ্টি তেতুল, বেগুনি চেরী, ফাইচাই, বারি-১ মাল্টা। রয়েছে সাদা লজ্জাবতির গাছ, বেল ও লিলি পাতাবাহার- এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মেলার স্টেলে স্থান পেয়েছে।
‘রাজশাহী নার্সারী’র স্টেলেই রয়েছে প্রায় ১৭০ রকমের গাছের চারা। বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের বলেন, সবার কাছে প্রায় একই রকমের চারা রয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু স্টলে রয়েছে নতুন প্রাজাতির চারাও। তার কাছে নতুন প্রজাতির আইভি লতা আছে- থাইল্যান্ডের গাছ। আইভি লতা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দামে।

নগরীর পঞ্চবটি এলাকার মতিউর রহমান এসেছেন গাছ কিনতে। বাড়িতে তার ছোট নার্সারি রয়েছে। সেখানে রয়েছে ৪০ ধরনের গাছ। মেলায় এসেছেন নতুন গাছের সন্ধানে। তিনি বলেন, এই মেলায় এতো প্রজাতির গাছ রয়েছে যে তার নাম অনেকেই জানেন না। আমরা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছের নাম জানি। কিন্তু এই গাছ আমাদের পরিবেশের বন্ধু, দেশের সম্পদ।

মেলায় গাছ কিনতে এসেছেন নগরীর টিকাপাড়া এলাকার রানী মোস্তফা। তিনি বলেন, তার বাড়ির ছাদে নার্সারিতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা তেমন গাছের সঙ্গে পরিচিত না। আজ জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ কিছু গাছ আমরা চিনে থাকি। এর বাইরেও অনেক গাছ আছে যা আমরা চিনিনা। গাছের সঙ্গে পরিচিত হওয়া দরকার আমাদের।

স/আ