ধান এলো তবে প্রাণ গেল ৯জনের, বাড়ি পৌছার দুই কিলোমিটার দূরত্বে ঘটলো অঘটন

কামাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

এ যেন লাশের মিছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পাশেই বালিয়াদিঘী গ্রাম। দুপুর হতেই জানাজার জন্য একের পর এক মরদেহগুলি নিয়ে যাচ্ছে কবরস্থানে স্বজনরা ও এলাকাবাসী। এ যেন লাশের মিছিল।

জানাজা, সময়, বসবাস, দূর্ঘটনার স্থান ও কবরস্থান এক সাথে একই এলাকায়। কেউ ছিলেন পারটাইম শ্রমিক, কেউ নিয়মিত। বাড়ি থেকে ৭৩ কিলোমিটার দূরে গিয়েছিলেন একসাথে শ্রমিক হিসেবে ধান কাটতে। ২২ দিন আগে একই গ্রামের ১৫ জন গিয়েছিলেন তারা এক সাথে। সেই ১৫ জনই একসাথে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ি পৌছার দুই কিলোমিটার দূরত্বে প্রাণ হারায় বাবা ছেলেসহ ৯জন।

নিহতরা হলেন, উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদিঘী গ্রামের নওসাদ আলীর ছেলে আবুল কাশেম, একই এলাকার শেখ মোহাম্মদের ছেলে তাজেমুল হক ও তার ছেলে মিঠুন, মো. এরফান আলীর ছেলে বাবু, মো. কাবিল উদ্দিনের ছেলে মো. কারিম, আমানুলের ছেলে মিলু, আজিমুল হকের ছেলে আহাদ আলী, লাওঘাটা গ্রামের রেহমানের ছেলে আতাউর রহমান এবং ভুটভুটি চালক সোনাপুর গ্রামের মাসুদ রানা।

এর মধ্যে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ছিলেন মিজানুর রহমান মিলু ,৯ জনের মধ্যে মিলুসহ তিন কিশোরের বিয়েও হয়েছিল কয়েক মাস আগে। তিন অত্মসত্বা নববধু হলো বিধবা । নিহত আহাদের ৪ মাসের নববধু আসমা,মিজানুর রহমান মিলুর নববধু আমেনা বেগম ও মিঠুনের নব বিবাহিতা স্ত্রী হয়ে গেল বিধবা।

একই গ্রামের ওরা ৯জন ধান নিয়ে ফিরলেও,ফেরেনি তাদের প্রাণ। বালিয়াদিঘীগ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া । স্বজনদের আহাজারীতে দেখতে যাওয়া মানুষদের চোখেও নেমে আসে জল। লাশ কবরস্থানে মরদেহের খাটিয়া নিয়ে যেতে গ্রামের মানুষদের সাথে যোগ দেয় পাশের গ্রামের মানুষজন।

একই সাথে বাড়ি পৌছার দুই কিলোমিটার দূরত্বে ঘটে গেল অঘটন। একই সাথে পাশাপাশি ৭ জন চীরনিদ্রায় শায়িত হলেন । নিহত তাজেমুল হক (৫০) ছেলে মিঠুন (২৬) কে নিয়ে প্রতিবেশী ১৫ জনের সাথে ২২ দিন আগে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার শিবপুর চৌরহাট গিরিসা গ্রামে গিয়েছিলেন শ্রমিক হিসেবে ধান কাটতে।

বৃহস্পতিবার ভোরে একই সাথে বাড়ি পৌছার দুই কিলোমিটার দূরত্বে ঘটে গেল অঘটন। প্রাণ হারায় বাবা ছেলেসহ আটজন। দায়পুকুরিয়া ইউনিয়নের বারিকবাজার-সোনাপুর ভাঙ্গাসাকো এলাকায় পৌঁছলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে নসিমনটি উল্টে ধানের বস্তার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই সাতজন ও পরে একজন মারা যান।

প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহত এমারুল ইসলাম ও আলিম হোসন বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে ধানকাটা শেষে মজুরির দেড়’শ মণ ধান নিয়ে নসিমনযোগে চালকসহ আমরা ১৬ জন বাড়ি ফিরছিলাম। আমি ও আরেকজন সামনের সিটে বসে ছিলাম। পথে সোনাপুর গ্রামের ভাঙা রাস্তায় পৌঁছালে বামে সড়কের পাশে গর্তের পানিতে পড়ে উল্টে যায় নসিমনটি।