দ্রুত নিষ্পত্তি চায় আসামিপক্ষ, পৃথক বেঞ্চ চায় রাষ্ট্রপক্ষ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা পিলখানা ট্রাজেডির ১৫ বছর আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় বাহিনীটির বিদ্রোহী সদস্যরা। বর্বরোচিত সেই হামলায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।

এ কাণ্ডের পর করা পৃথক দুই মামলার মধ্যে বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার বিচারিক আদালতের পর হাইকোর্ট বিভাগেও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ১৫ বছর আগে সংঘটিত অপরাধের আলোচিত এ মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চায় আসামিপক্ষ। অপরদিকে, আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে এ মামলা শুনানির জন্য আলাদা বেঞ্চের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ।

আসামির দিক থেকে ইতিহাসের বড় পৃথক দুই মামলার মধ্যে এখনো বিচারিক আদালতেই নিষ্পত্তি হয়নি বিস্ফোরক আইনের দায়ের হওয়া অপর মামলাটি। ১৫ বছরেও কেন এই মামলা নিষ্পত্তি হয়নি তার কারণ রাষ্ট্রপক্ষের ব্যাখ্যা করা উচিত বলে মনে করেন আসামিদের আইনজীবীরা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য, বিশাল সংখ্যক আসামি থাকায় সাক্ষী ও জেরা শেষ করতে অনেক ক্ষেত্রে আসামিপক্ষ বেশি সময় নিচ্ছেন।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের মামলায় রায় দেন বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। আর খালাস পান ২৭৮ জন। এরপর নিয়ম অনুসারে মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছলে আপিল করেন আসামিরা। অপরদিকে কয়েকজন খালাসপ্রাপ্ত আসামির বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষও।

হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেওয়া হয়। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। এ ছাড়া খালাস পান ৪৫ জন। এরপর হাইকোর্টে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করে। আসামিপক্ষ থেকেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতে আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত শুনানির দাবি জানিয়ে

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আকুল আবেদন, এই নিরীহ আসামিদের সব দিক বিবেচনা করে মামলাটির কার্যক্রম যদি দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেন তা হলে আমার মনে হয় যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে মামলা শুনানি শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সরকারপক্ষ থেকে আমরা আশা করছি যে, ট্রায়াল কোর্ট যাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন এবং হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিলেন, সেই আদেশ যেন সুপ্রিমকোর্টেও বহাল থাকে। কিন্তু এ মুহূর্তে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নেই। আশা করছি বিচারক এলে এ বিষয়ে পৃথক একটি বেঞ্চ গঠন করা হবে। কারণ এ মামলায় ওনারা শুনানি শুরু করলে অন্য মামলা শুনতে পারবেন না। একনাগাড়ে শুনানি করলেও দুই মাসের আগে শুনানি শেষ হবে না।’

এ মামলায় ১৩৯ জনের ফাঁসি বহালের পাশাপাশি যাদের দণ্ড কমানো হয়েছে, সেই বিষয়েও শক্ত আইনি অবস্থান নেওয়া হবে বলে জানান রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা।

এদিকে হত্যা ও বিদ্রোহ মামলায় খালাস মিললেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলাটির কার্যক্রম ১৫ বছর ধরে শেষ না হওয়ায় কারাগার থেকে দুই শতাধিক আসামি মুক্তি পাচ্ছেন না। বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়ে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারকের সংকট থাকলেও নিম্ন আদালতে তো সংকট নেই। অথচ নিম্ন আদালতের মামলার ট্রায়াল চলছে ১৫ বছর যাবৎ। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিত।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এত বেশি আসামি, তাদের উকিলও অনেক। একজন সাক্ষীকে যদি ১০০ জন জেরা করেন তা হলে কত সময় লাগে? শুধু প্রসিকিউশনের জন্যই তো নয়, সময় লাগছে তাদের (আসামিপক্ষের) জন্যও।’

প্রসঙ্গত, পিলখানায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ সেনাসদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার কর্মসূচি রয়েছে।