‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নিয়ে নির্মিত হচ্ছে প্রামাণ্যচিত্র

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঐতিহাসিক আয়োজন ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশে’র ৪৮ বছর পূর্তিতে নিউইয়র্কে হয়ে গেল অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান। ‘ট্রিবিউট টু জর্জ হ্যারিসন, পণ্ডিত রবি সংকর অ্যান্ড আদার ফ্রেন্ডস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম নামে একটি সংগঠন।

শোকের মাসের প্রথম দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর দেখানো হয় দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশের ওপর নির্মাণ করা ১৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র। তখন গোটা মিলনায়তন জুড়ে ছিল পিনপতন নিরবতা। অনেকের চোখে তখন ছিল গভীর আবেগের জল। কনসার্টে জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া কালজয়ী গান ‘বাংলাদেশ… বাংলাদেশ…’ গেয়ে শোনায় কিশোর শিল্পী ফারদিন মাহি। কবি ধীমান নাথের করা বাংলাদেশ গানটির ভাবানুবাদ আবৃত্তি করেন মোহাম্মদ আলী বাবুল।

ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডমের অন্যতম সমন্বয়ক ডা. ফেরদৌস খন্দকারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। কনসার্ট ফর বাংলাদেশের প্রত্যক্ষদর্শী কাজী সাহিদ হাসান ও ঐ সময়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করা প্রবীর রায় স্মৃতিচারণ করেন। আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ ও শহীদ পরিবারের সন্তান ফাহিম রেজা নূর।

ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডমের সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসান। সেতার পরিবেশন করেন কনসার্ট ফর বাংলাদেশে সরোদ বাজানো ওস্তাদ আলী আকবর খানের নাতি মোর্শেদ খান অপু। এসময় তবলায় সহায়তা করেন তপন মোদক। অনুষ্ঠানে আগামী প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলে মাইশা, নুসরাত, সাফোয়ান ও অপর্ণা। পুরো আয়োজনে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছেন সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা আশরাফুন নাহার লিউজা।

অনুষ্ঠানে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর ওপরে একটি তথ্যবহুল প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন শামীম আল আমিন। তিনি এরিমধ্যে এ নিয়ে কাজও শুরু করেছেন। আর এমন উদ্যোগের ভূঁয়সী প্রশংসা করে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশী বন্ধুদের পাশে এসে দাঁড়ানোর অসামান্য একটি উদ্যোগের নাম দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের গৌরবজনক একটি অধ্যায়। তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন বিশ্বের বিবেকবান অনেক মানুষই পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রদূত। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সে কনসার্টকে ঘিরে ভিন্ন কিছু করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

শোকের মাসে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীত তারকারা যখন কনসার্টটি করলেন, তখন গোটাবিশ্ব আরও ভালো করে জেনেছিল, বাংলাদেশে কি নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। যার ফলে বিশ্ব জনমত গড়ে উঠেছিল আরও প্রবলভাবে’। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আগের সেই অবস্থায় নেই, আমাদের দেশ এখন গোটা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল’।

এ সময় আয়োজকদের পক্ষে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘বিদেশী বন্ধুদের স্মরণ করার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে নিয়ে যেতে পারি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের কাছে”।

আয়োজনের উদ্যোক্তা শামীম আল আমিন জানান, কেবল কনসার্ট ফর বাংলাদেশে অংশ নেয়া শিল্পীদের জন্যই নয়। ভবিষ্যতে মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী অন্য বিদেশী বন্ধুদেরও স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা জানাবে ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট, রোববার নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজিত কনসার্টটির প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবি সংকর। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, রিঙ্গো স্টারসহ অনেকে। রবি শংকরের সঙ্গে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সরোদবাদক আলি আকবর খানও ছিলেন অগ্রভাগে। তবলায় ছিলেন আল্লা রাখা আর তানপুরায় কমলা চক্রবর্তী। কনসার্ট থেকে পাওয়া অর্থ পরে ইউনিসেফের মাধ্যমে শরনার্থীধের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হয়।