দেড় মাসে কৃষকের লোকসান ৫৬ হাজার কোটি টাকা

কোভিড-১৯ সৃষ্ট মহামারীর প্রভাবে দেড় মাসে সারা দেশে কৃষকের লোকসান হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারও বেশি। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত এই ক্ষতির হিসাব উঠে এসেছে ব্র্যাকের পরিচালিত গবেষণায়।

বৃহস্পতিবার এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণার আওতায় করা দুটি সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে ব্র্যাক।

এ সময় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল, এসিআই এগ্রিবিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী, ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কৃষিখাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা দুটি পরিচালিত হয়। সারা দেশের ১ হাজার ৫৮১ জন কৃষক (ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী) এতে অংশগ্রহণ করেন।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, মহামারী শুরু দিকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ভোক্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে- মোটা চাল, মসুরের ডাল ইত্যাদির দাম ও বিক্রি বেড়ে যায়। চাল ও মসুরের ডালের দাম ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ এবং ব্যবসায়ীদের এই পণ্যগুলোর বিক্রি ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

তবে বাজারে চাহিদা বাড়লেও তা কৃষকদের কোনও উপকারে আসেনি। কারণ মহামারীর আগেই তারা তাদের মজুদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। অপরদিকে ত্রাণ-বহির্ভূত এবং পচনশীল পণ্যগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণে ৮৮ শতাংশ কৃষক (মাছ চাষীদের ১০০ শতাংশ) আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। কৃষকরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ৬৬ শতাংশ, সীমিত সময়ের জন্য বাজার খোলা থাকা ৫২ শতাংশ, উৎপাদনের উপকরণসমূহের উচ্চমূল্য ৪৫ শতাংশ এবং শ্রমিক সংকট ২৮ শতাংশ।

আর এই দেড় মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা। সেই হিসেবে সারা দেশে কৃষির প্রতিটি উপখাতের সব কৃষকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে কমেছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, এই সঙ্কট সামাল দিতে আড়তদার, পাইকার, ফড়িয়া এদেরকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, বাজারে এদের বিরাট ভূমিকা থাকে।

এসিআই এগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাত, ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নতি ঘটাতে সরকারের ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।

ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, মহামারী শুরুর পর ব্যাপকহারে চাহিদা কমায় চাষীদের সবজি, দুধ নষ্ট হয়েছে, ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শুভ হবে না। কৃষকরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিলে বা কমিয়ে ফেললে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।