দেখে মনে হচ্ছিলো সে সিরিয়াল কিলার : ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরে কয়েকজন শিক্ষক ও বন্ধুকে তার ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। সেসময় তিনি ওই ধর্ষককে খুবই দাম্ভিক, ঠাণ্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার এবং এর আগেও একাধিকবার ধর্ষণের মতো অপরাধকারীর মতো মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

ধর্ষনের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, ‘ধর্ষক বারবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছিল। আমি ভাবছিলাম, আমি ঢাবি শিক্ষার্থী বললে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার পরিচয় জানলে আমি বাঁচবো না। ওই লোক খুব দাম্ভিক ছিল। আমি তাকে প্রতিরোধ করতে পারিনি।’

ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাতে হাসপাতালে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম ও সামিনা লুৎফা। ভিকটিম শিক্ষার্থীর সঙ্গে তারা সহমর্মীতা নিয়ে কথা বলেছেন, যার অনেক কিছু তারা গণমাধ্যমকেও জানাতে রাজি হননি।

ঘটনার বিবরণে ভিকটিম কী বলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সাদেকা হালিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়েটির সামনে পরীক্ষা। স্টাডি সার্কেলে পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীরা। সে কারণেই বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তার সঙ্গে বাড়তি পোশাক ছিল, পড়ালেখার বই-নোটস আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। মেয়েটির বিবরণীতে ধর্ষক একজনই ছিল।’

ধর্ষক কেমন ছিল দেখতে তা বলতে পেরেছে কিনা প্রশ্নে অধ্যাপক সাদেকা বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছিলো সিরিয়াল কিলার। ঠান্ডা মাথায় যে ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটিয়েছে একাধিকবার। এবং মেয়েটিকে জোর করে পোশাকও পরিবর্তন করিয়েছে, আবার ধর্ষণ করেছে। ভিকটিম জানিয়েছে, ধর্ষক তার পরিচয় জানতে চেয়েছে বারবার। মেয়েটি আন্দাজ করছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় পেলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। তাই সে মুখ খোলেনি।’

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পরে থেকে শেওড়ার যে বন্ধুর বাসায় রওনা দিয়েছিলেন তিনি, সেই বন্ধুর বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে মোট সাড়ে ৩ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঠিক কতক্ষণ তিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলেন তা বলতে পারেননি। তবে জ্ঞান ফিরে আসার পর বুঝতে পারেন, ঘণ্টা দুয়েক পার হয়েছে এবং ধর্ষক তখনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

কীভাবে পালিয়ে এলেন সে বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ধর্ষণের কোনও একসময় মেয়েটি জ্ঞান হারায়। এরপর যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে ধর্ষককে দেখতে পায়। ধর্ষক পেছন ফিরে ভিকটিমের ব্যাগ থেকে কিছু বের করার চেষ্টা করছিল। এই সুযোগে সে ওই স্থান থেকে পালিয়ে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা জানান, ‘কিছু দূর হেঁটে সে (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) চেষ্টা করেছে সিএনজি বা গাড়ি থামাতে। না পেরে রাস্তা পার হয়ে বন্ধুর বাসায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন রাত সাড়ে ১০টা।’

সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ঘটনাস্থল এত অনিরাপদ হবে- এটা না জানা থাকলে আন্দাজও করার কথা না। মেয়েটির বয়স খুবই কম। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, হাতে নানা জায়গায় কালসিটে। মেয়েটি বেঁচে আছে অনেক ব্যথা নিয়ে। অসম্ভব মানসিক শক্তি ছিল বলে প্রায় তিন ঘণ্টা পরে সে ওখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে।’

ধর্ষকের চেহারার বিষয়ে তিনি কিছু জানিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে অধ্যাপক সামিনা বলেন, ‘চেহারার বিষয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছেন সেই শিক্ষার্থী। লোকটি দাম্ভিক ছিল বলেও জানিয়েছেন। তাকে পেছন থেকে ধরে নিয়ে গেছে সে।’