‘দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবেলা করা যাবে না’

দশ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

মঙ্গলবার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, এবার দরকার ছিল ছকের বাইরে একটা বাজেট। কিন্তু বাজেট দেখে মনে হচ্ছে, দেশে করোনা বলে কিছু নেই। এটি অস্বাভাবিক সময়ের একটি স্বাভাবিক বাজেটমাত্র।

ইনু বলেন, করোনার কারণে অনেক দেশ বাজেট তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এই সংকটের মধ্যেও বাজেট দিয়ে আমাদের গর্বিত করেছেন।

দেশে এখন অস্বাভাবিক সময় যাচ্ছে উল্লেখ করে জাসদ সভাপতি বলেন, করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়া বাজেটের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ গতানুগতিক, গৎবাঁধা এবং ছকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশীয় শিল্প সুরক্ষাসহ কর খাতে কিছু ভালো প্রস্তাব থাকলেও বড় ধরনের কোনো সংস্কার প্রস্তাব নেই। দ্বার উন্মোচনকারী উদ্ভাবনী কিছু নেই।

সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না। দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবেলা, অর্থনীতি সচল করা যাবে না। স্বচ্ছতা, সমন্বয়হীনতা ও অদক্ষতা দূর করে স্তরে স্তরে সুশাসন কায়েম করতে হবে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, সঠিকভাবে অর্থমন্ত্রী অগ্রাধিকার নির্ণয় করলেও খাতভিত্তিক বরাদ্দ গতানুগতিক। এমন কোনো বরাদ্দ নেই যেটা স্বাস্থ্যসেবার খোলনলচে বদলে দিয়ে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে। নতুন দরিদ্র ও নতুন কর্মহারা কাজ প্রত্যাশী ২৬ লাখ লোককে একটি স্থায়ী দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। রাজস্ব খাত, ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজার সংস্কারের দাবির কোনো বক্তব্য নেই।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং দুটি প্রকল্প মিলিয়ে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে- এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু মূল বরাদ্দ ৫ দশমিক ১ শতাংশ। গতবার এটা ছিল ৫.৮ শতাংশ। অর্থাৎ, মূল বরাদ্দ কমে গেছে। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যখাতে তিনটি চাহিদা কোভিড-১৯ করোনা মোকাবেলা করা, জিডিপির ৫ শতাংশ দিতে হবে এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে কোভিড-১৯-এর ব্যবস্থা এ বছরই নিতে হবে। কয়েকদিন পরে বুঝা যাবে। এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দে হবে না। আরও বরাদ্দ দেয়া লাগবে।

এলাকাভিত্তিক লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে ইনু বলেন, দেরিতে হলেও লাল-সবুজ-হলুদ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে- এটা ভালো। কিন্তু এখানে ব্যবস্থাপনার কাজ তো করা হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে কাজ করবে সেই টিম নেই। কারিগরি নয়, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ একটি জাতীয় কমিটি দরকার। জনস্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেবে। পুলিশ প্রশাসন এলাকা পাহারা দেবে। এ জন্য কমপক্ষে ৫ হাজার কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। আর তার জন্য এখনই থোক বরাদ্দ দরকার।

তিনি বলেন, কৃষি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষি কমিশন গঠন করতে হবে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করতে হবে। কৃষি যন্ত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রণোদনা দিতে হবে। সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলে স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে টাকা ধার করতে হবে। মানুষ বাঁচাতে হবে।

বাজেট বক্তব্যে কোভিড-১৯ মোকাবেলা, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ও সামাজিক সুরক্ষা- এই তিনটি খাত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন জাসদ সভাপতি।

 

সুত্রঃ যুগান্তর