দুর্গাপুরে তীব্র শীত আর অজ্ঞাত রোগে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে পান

গোলাম রসুল:
পান বরজ নিয়ে যাদের জড়িয়ে আছে স্বপ্নের বাসনা ও ভালো বাসা। আজ সেই বাসনা যেন চোখের সামনে অশ্রু হয়ে ঝরছে নির্বিকার হয়ে। আজ সেই বরজটির দিকে হতভাগ্য হয়ে চেয়ে আছেন চাষির পরিবার। দুর্গাপুরে হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে পান বরজে রোগ। আর এই রোগে বরজ থেকে ঝরে পড়ছে পান। দুর্গাপুর উপজেলায় এক মাত্র অর্থকরী ফসল হচ্ছে পান। আর সেই পান চাষিদের পরিবারে এখন চলছে কান্নার রোল।

জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে বরজ গুলোর পান হঠাৎ করেই ঝরে পড়ছে। এতে করে পানচাষীদের পরিবারে হাহাকার হয়ে উঠেছে। এলাকার অনেক প্রবীণ পান চাষিদের নিকট থেকে জানা গেছে, উপজেলার বারানই নদী বিধৌত কালীগঞ্জ, দাওকান্দী, ধোর্সা, ধোপাঘাটা, ছিলো পান চাষের প্রথম এলাকা। এ অঞ্চলেই পান চাষ প্রথম শুরু হয়। তখন পান কেনা বেচা হতো রাতে, যৌবনভরা বারানই নদীতে নৌকা ভর্তি পান চলে যেত মাধনগর রেল স্টেশনে। পরে রেলগাড়ীর মাধমে দেশের ছোট বড় শহরে পাইকারী বিক্রি হতো। উপজেলার দাউকান্দি, পারিলা, রসুলপুর, ব্রক্ষপুর, আনুলিয়া, সুখানদিঘী,পানানগর, হোজা,মাড়িয়াসহ বিভিন্ন পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ৯৫ ভাগ পরিবারে পান বরজ আছে। পানই তাদের একমাত্র অর্থকারী ফসল। পান থেকে হতে তারা সারবছর সংসার পরিচালনা করেন।

গত এক মাস হতে এ অঞ্চলের পান বরজ গুলোতে অজ্ঞাত পচন রোগের আক্রমন দেখা দিয়েছে। বরজে গুলেতে হঠাৎ করে পানের বোটা নরম ও পাতা লাল হয়ে ঝরে পড়তে শুরু করেছে। এ রোগের কোন সঠিক ঔষধ না পাওয়ার কারনে ব্যাপক হারে গাছ থেকে পান ঝরে পড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই অনেক পান বরজ পান ঝরে পড়ার কারনে বরজ গুলি পান শূন্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে অনেক পান চাষি সেই পান বরজ গুলো ভেঙ্গে অন্য ফসল ফলানোর জন্য জমিগুলো নতুন ফসল ফলানোর উপযোগি করে গড়ে তুলছেন। এ এলাকার পান বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হয়ে থাকে। ঝরা বা খোসে পড়া পান বিক্রি করতে না পেরে অনেক পান চাষি হাটে পান ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে। বর্তমানের বাজারে যে পান গত এক মাস পুর্বে বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় সেই পান ঝরে পড়ার কারনে বর্তমার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। আবার অনেকের পান বিক্রি অযোগ্য হয়ে পড়ায় বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নির্বিকার হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

উপজেলার দাওকান্দি বহ্মপুর গ্রামের পান চাষী নাদের আলী, কাদের আলী, আলাউদ্দিন ও সুখানদীঘি গ্রামের পানচাষি নূরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পান গাছে ১৫/২০ টি করে পান ছিলো। হঠাৎ করে পান ঝড়তে শুরু করে। সেই সাথে পান গাছের পচন ও বৃদ্ধি পায় পান ঝরে পড়ার কারনে এখন গাছ প্রতি ২/১টি করে পান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সেটাও থাকবেনা বলে আশংকা করছেন তারা। ৬৪টি পানে ১বিড়া এবং ৩২ বিড়ায় ১ পোয়া) যে পানের বিড়া গত এক মাস পুর্বে বিক্রি হয়েছে ১৩০থেকে ১৬০ টাকায় সেই পান ঝরে পড়ার কারনে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকা বিড়া।

উপজেলার পানানগর গ্রামের পান চাষি মুনসুর রহমান, বজলুর রশিদ,আলীমুদ্দিন জানান, তাদের একটি মাত্র সহায়সম্বল আর সেটি হলো পানের বরজ। তারা সেই পানের বরজ হতে বছরের পর বছর পরিবারের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়াসহ সকল প্রকার কার্যক্রম পরিচালনায় করে আসেন। বর্তমানে পানের বরজে পানপাতা লাল বরণের হয়ে ঝরে পড়তে পড়তে প্রায় বরজ গুলো পান শূণ্য হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। তারা বিভিন্ন ঔষধ স্প্রে করেও সুফল পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. বিমল কুমার প্রামানিক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এক টানা প্রায় ১২দিন তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারনে পান বরজ থেকে পান ঝরে পড়ার এটি একটি কারন। এছাড়াও এখন পর্যন্ত পানের বিভিন্ন প্রকার জাত না বের হওয়ায় একই জাত বার বার চাষ করার ফলে বরজে রোগবালাইয়ের আশংকা বেশি দেখা দিচ্ছে। পান ঝরে পড়া বন্ধ করার এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক বের হয়নি। আবহাওয়া অনুকুলে এলেই কিছুদিনের মধ্যে বরজগুলো পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আসবে বলে জানান।

তিনি আরো জানান, পান চাষীদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন স্থানে চাষীদের নিয়ে সভা, সেমিনার ও বরজ রক্ষায় রাসায়নিক ও পরিচর্যার বিষয়ের লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
স/শ