দুর্গাপুরে এনজিওর কিস্তির টাকা না দিতে পেরে এক বছরের শিশুসহ মা জেলহাজতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুর্গাপুরে এনজিওর কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এক বছরের শিশুসহ মাকে গ্রেফতার করে দুর্গাপুর থানা পুলিশ। মানবিক এই বিষয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত নিলুফা বেগম (৩৬) উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের হতদরিদ্র  দিনমজুর আব্দুস সালামের স্ত্রী। গ্রেফতারকৃত নিলুফা বেগমের স্বামী আব্দুস সালাম জানান, সাংসারিক নানা দায় বসত প্রায় দুই বছর পূর্বে দুর্গাপুর উপজেলা থেকে পরিচালিত ‘বীজ’ নামক এনজিও থেকে নিজ স্ত্রী নিলুফা বেগমের নামের জনতা ব্যাংক দুর্গাপুর শাখার চেক এনজিওতে জমা দিয়ে মাসিক কিস্তিতে একলক্ষ টাকা ঋণ নেন।
ঋণ নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত ভাবে এনজিওর মাষ্টারের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে থাকেন। সহায় সম্বলহীন হত দরিদ্র আব্দুস সালাম দিনমজুরি করে একদিকে পরিবার পরিজনদের দিনে দু’ মুঠো ডাল ভাত, পরিধেয় বস্ত্র এবং চিকিৎসার খরচ অন্যদিকে এনজিওর কিস্তির টাকার জোগাড় করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক টেনশনের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপতালে ভর্তি হন।
হাসপাতালে প্রায় দেড়মাস চিকিৎসাধীন থাকেন আব্দুস সালাম। জমানো কিছু টাকা সেই সাথে ধার-কর্য ও এলাকার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা করে চিকিৎসার খরচ ব্যবস্থা করে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেন।
বাড়ীতে ফেরা মাত্রই এনজিওর কর্মী ও ম্যানেজার মহিরুল ইসলাম এসে কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং বলে দ্রুত টাকা পরিশোধ না করলে মামলা করে জেলের ভাত খাওয়াবে।
আব্দুস সালাম আরো বলেন, এনজিওর চাপের মূখে মামলার ভয়ে এলাকার সুদখোর মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এনজিওর ম্যানেজারকে আরেকটি কিস্তি দেন।
পরের মাসে সুদখোর মহাজনের চাপে সুদের টাকা দেওয়ায় এনজিওর কিস্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আব্দুস সালাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ‘বীজ’ এনজিওর দুর্গাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মহিরুল ইসলাম আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফার বেগমের জমা রাখা জনতা ব্যাংকের চেক ডিজনার করে নিলুফা বেগমকে আসামী করে রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করে।
এরপর দেশে মহামারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রভাব আসলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি আব্দুস সালাম দিশেহারা হয়ে পড়ে। টাকার অভাবে শহরে গিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে না পারায় বিজ্ঞ আদালত হত দরিদ্র দিনমজুর আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফা বেগমের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে।
এতে গত ২৪ জানুয়ারী রবিবার আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে দুর্গাপুর থানা পুলিশ মাড়িয়া গ্রামের নিজবাড়ী থেকে আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফাকে গ্রেফতার করে।
এক বছরের দুধের বাচ্চা সানিয়াকে নিয়ে অসহায় মা নিলুফা বেগম থানায় রাতভর আটক থাকার পর ২৫ জানুয়ারী সোমবার সকালে এক বছরের শিশুকন্যা সানিয়াকে সহ মা নিলুফা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করে দু্র্গাপুর থানা পুলিশ।
এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এক বছরের দুধের বাচ্চা সহ মাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর বিষয়টি এলাকাবাসী মেনে নিতে না পারায় ওই এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এনজিওর কর্মী ও ম্যানেজারের প্রতি এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। যে কোন সময় কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মাহামুদুল হাসান বলেন, আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা থানায় আসায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে আসামীর এক বছরের দুধের শিশু থাকায় পুলিশ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দুধের গ্রেফতারের পর শিশুকন্যাকে সহ আসামী নিলুফা বেগমকে থানা হাজতে না রেখে অফিসারদের ডিউটির কক্ষে যত্ন সহকারে রাতটুকু রেখে সকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ‘বীজ’ এনজিওর দুর্গাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মহিরুল ইসলামের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স/রি