গা শিউরে ওঠা কুসংস্কারের বলি দুই বোন আলেখ্যা-দিব্যা

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ঘটেছে এক ভয়াবহ ঘটনা। বাবা-মায়ের হাতে খুন হতে হলো দুই উচ্চ শিক্ষিত বোনকে। সম্প্রতি শুধু অন্ধবিশ্বাসের কারণে এক প্রিন্সিপাল এবং তার স্ত্রী নিজের দুই কন্যাকে হত্যা করেছে। ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত দম্পতি পদ্মজা এবং পুরুষোত্তম নাইডু অন্ধ্রপ্রদেশের শিবনগর এলাকার মাদানাপাল্লের বাসিন্দা। একজন বেসরকারি স্কুলে কাজ করেন। অপরজন আবার মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল। তাদের বড় মেয়ে আলেখ্যা (২৭) ভোপাল থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। অন্যদিকে, ছোট মেয়ে সাই দিব্যা (২২) বিবিএ পাস করেছেন। তিনি মুম্বাইয়ের এ আর রহমান মিউজিক স্কুলে পড়াশোনা করতেন। করোনাকালে ওই দম্পতি এবং তাঁদের সন্তানরা বাড়িতেই ছিলেন। প্রতিবেশীরা গত কয়েকদিন ধরেই নানা রকম আওয়াজ পাচ্ছিলেন। এরপরই তারা পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানায়।

পুলিশ এসে ওই বাড়িতে ঢুকতে গেলেই দম্পতি তাদের বাধা দেয়। এরপর জোর করেই পুলিশ কর্মকর্তারা ভেতরে ঢোকেন। কিন্তু প্রবেশ করেই অবাক হয়ে যান। এক মেয়ের মৃতদেহ পূজার ঘরে পড়ে থাকতে দেখা যায়, অন্য আরেকজনের মৃতদেহ পাশের একটি ঘরে লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা পড়েছিল। তাঁর শরীরের উপর আবার ফুলও ছিল। এরপরই ওই দম্পতিকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে দু’জন দাবি করেন, তারা দৈববাণী শুনতে পান। কেউ একজন অদৃশ্য থেকে বলছে, ঘটনার দিন রাতেই ‘কলিযুগ’ শেষ হচ্ছে। পরদিন থেকে শুরু হবে ‘সত্যযুগ’। তাদের দুই কন্যাকে উৎসর্গ করলে, তারা পরদিন নবজন্ম নেবে। আর এই কারণেই ওই কাজ করেছে দম্পতি। শুধু তাই নয়, পুলিশের সন্দেহ দুই মেয়েকে তারা বেশ কয়েকদিন আগেই খুন করেছিল। খুন করতে ব্যায়াম করার ডাম্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। আপাতত মৃতদেহ দুটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে দু’জনকেই আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের।

মাদানাপাল্ল পুলিশের ডিএসপি রবি মনোহর চারি বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, এই শিক্ষক দম্পতি অত্যন্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কারণ ওই দম্পতির কন্যাদের নবজন্ম হবে বলে একদিনের জন্য হলেও তাদের (মৃতদের) লাশ ঘরে রাখতে বলেছিল তারা।

এই ঘটনায় গোটা এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। খবর প্রকাশ্যে আসায় হতবাক আরো অনেকে। একটি শিক্ষিত পরিবারে এতটা কুসংস্কার কেন? কেন অন্ধবিশ্বাসের জেরে দুই সন্তানকে বলি দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতেও তাদের হাত কাঁপল না? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাঁরা।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ