দুই মন্ত্রণালয়ের যাঁতাকলে ১৭৩০ আইসিটি শিক্ষকের মানবেতর জীবন-যাপন

মাহাবুব হোসেন, নাটোর:
বেতন ভাতা ছাড়ে দুই মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির যাঁতাকলে পড়েছেন দেশের ১ হাজার ৭৩০জন আইসিটি শিক্ষক। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকরা।  কবে নাগাদ বেতন ভাতা পাবেন সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা। সারা একহাজার ৭৩০জন শিক্ষককের মধ্যে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক নাটোরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বেতন-ভাতা ছাড়াই চাকরি করছেন।
জানা গেছে, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানের প্রায় ৬ বছরেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি এসব শিক্ষকদের। বেতন ছাড়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির যাঁতাকলে আইসিটি শিক্ষক হয়েও এনালগ জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এখন তারা না পারছেন চাকরি ছাড়তে, না পারছেন বেতন নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোঁটাতে।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার কম্পিউটার শিক্ষা চালু করেন। ২০১২ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়টি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই বিষয়টি পড়ানোর জন্য দায়িত্ব পান কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

বর্তমানে নাটোরে বেতন না পাওয়া আইসিটি শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। আর সারা দেশে এর সংখ্যা এক হাজার ৭৩০ জন ।
জেলার সিংড়া উপজেলার বৃষ্ণপুর ইটালী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মশিউর রহমান জানান, ‘২০১২ সালের শেষের দিকে আমি শিক্ষক হিসেবে  নিয়োগ পাই। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের তিরস্কারের পাত্র হয়েছি।’
একই এলাকার আলহাজ্ব আব্দুর রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক রুখসানা পারভীন জানান, ‘পরিবারের লোকজন আশা করেছিলেন, চাকরি করে আমি পরিবারের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা সহায়তা করতে পারবো। কিন্তু আজও বেতন পায়নি। ফলে মাঝে মাঝে স্বামী ও পরিবারের লোকজন বিরক্ত হয়ে আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ এমপিও বঞ্চিত আইসিটি শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি আশিকুজ্জামান  বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ‘এমপিও বঞ্চিত আইসিটি শিক্ষকদের বেতন চালুর দাবিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় দীর্ঘ ২৩ দিন আন্দোলন করা হয়েছে। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ওয়াহেদুজ্জামান স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সমস্যাটি সমাধানে তাদের আশস্ত করেছিলেন। কিন্তু সে আশ্বাস এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ১ হাজার ৭৩০ জন আইসিটি শিক্ষকের বেতন ছাড়ের বিষয়টি এখন শিক্ষামন্ত্রণালয় তদন্ত করছে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। যা অর্থমন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর এই চিঠি চালাচালির যাঁতাকলে পড়ে দুর্বিসহ এনালগ জীবন যাপন করছেন আইসিটি শিক্ষকরা।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন আইসটি শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপন করলে স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, বিষয়টি এখন দুই মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। এখানে শিক্ষা অফিসের কিছুই করার নেই। আগামী বাজেটে যদি অর্থ বরাদ্দ হয় তাহলে হয়তো আইসিটি শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেতে পারে।

স/শ