দুই ফেরিঘাট গোপনে আ’লীগ ও বিএনপি নেতার কাছে ইজারা দিল রাসিক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পদ্মা নদীর আমিরপুর (বুলন) ও বিষপুর ফেরিঘাট (সদর) গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) বিরুদ্ধে। সপ্তাহখানেক আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী দুই ইজারাদারকে ঘাট দুটি ইজারা দেওয়া হয়।

 

উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান না করে নামমাত্র মূল্যে দুই ফেরিঘাট ইজারা দেওয়ার কারণে সরকার অন্তত কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

 

জানা গেছে, টানা চতুর্থবারের মতো বিষপুর ফেরিঘাট ইজারা পেলেন নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আবু বাক্কার কিনুর ছেলে মাসুদ রানা। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে এ ঘাটের টানা ইজারা পেয়েছেন কিনু। আমিরপুর ফেরিঘাট তৃতীয়বারের মতো ইজারা দেওয়া হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টুর ভাগ্নে মারুফ হোসেনকে। ভাগ্নের নামে ইজারা নিলেও তিনিই মূলত ঘাটের নিয়ন্ত্রক বলে নিশ্চিত করেছে নগর সংস্থা ও স্থানীয় একাধিক সূত্র।

 

নগর সংস্থার বিধি অনুযায়ী, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঘাট ইজারা দিতে হবে। এ জন্য অন্তত ১৫ দিন আগে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করার কথা। এ ছাড়া ইজারার আরেকটি শর্তে বলা হয়েছে, আগের তিন বছরের গড় আয় অথবা আগের বছরের আয়ের যেটি বেশি তার ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ধরে সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু ওই দুই ফেরিঘাট ইজারায় এসব নির্দেশনার কোনোটিই মানা হয়নি। পক্ষান্তরে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে শুধু ১০ শতাংশ করে রাজস্ব বাড়িয়ে গোপনে ওই ঘাট দুটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর সংস্থার একজন রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, বাংলা ১৪২৩ সালে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকায় মাসুদ রানাকে বিষপুর এবং পাঁচ লাখ ১১ হাজার টাকায় মারুফ হোসেনকে আমিরপুর ফেরিঘাট ইজারা দেওয়া হয়। গত বছরের ইজারা মূল্যের সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত যোগ করে এবারও ওই দুজনকেই এজারা দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৪২১ ও ১৪২২ সালে বিষপুর ইজারা পেয়েছিলেন মাসুদ রানা। এরও আগে টানা ইজারা পেয়েছেন মাসুদ রানার বাবা বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর আবু বাক্কার কিনু।

 

অন্যদিকে ১৪২১ সালে আমিরপুর ফেরিঘাট ইজারা পেয়েছিলেন মোমিন হোসেন। পরের বছর থেকেই ইজারা পাচ্ছেন মারুফ হোসেন। প্রতিবছরই আগের বছরের ইজারা মূল্যের সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ করে ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

 

যোগাযোগ করা হলে নগর সংস্থার সচিব খন্দকার মাহবুবুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি।

 

তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, বিধি মেনে ওই দুই ইজারাদারকে আবারও ঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। যে সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানে দরপত্র কমিটির সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে গত বছরের মূল্যের চেয়ে ১০ শতাংশের বেশি যোগ করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব হারানোর বিষয়টি ভিত্তিহীন।

 

ঘাট ইজারা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল আলম বেন্টু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মারুফ হোসেন তাঁর ভাগ্নে বলে স্বীকার করেন তিনি।

 

মারুফ হোসেন দাবি করেন, কম মূল্যে ঘাট ইজারার প্রশ্নই আসে না। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ঘাট দুটি ইজারা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত টোল আদায়েরও কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত হারেই টোল আদায় করা হচ্ছে।

 

বিষপুর ও আমিরপুর ফেরিঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভুঁইয়া ট্রেডার্সের মালিক ইউনুস ভুঁইয়া। তিনি দেশের একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে খাদ্য উপকরণ সরবরাহ করেন। খাদ্য তালিকা অনুযায়ী গরু বা গবাদি পশুও সরবরাহ করেন তিনি। এ ছাড়া কোরবানি উপলক্ষে তিনি রাজশাহী সীমান্তের বিভিন্ন বিটে আসা ভারতীয় গরু এপারে নিয়ে আসেন। এসব গরু আনতে হয় পদ্মার আমিরপুর ও বিষপুর ফেরিঘাট দিয়ে।

 

গরু আনতে ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় বলে এ ঠিকাদার গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা ও স্থানীয় সরকার সচিব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রাজশাহী সেক্টর কমান্ডারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী নগর সংস্থার সচিবকে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এ নির্দেশ আমলে নেননি সচিব। এ ছাড়া ওই দুই ঘাটে টোল আদায় পর্যবেক্ষণের নির্দেশও উপেক্ষিত হয়। এমনকি উচ্চ আদালতের আদেশও মানা হচ্ছে না।

 

 

তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই ঘাটে দুজন পর্যবেক্ষক রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পারাপার কমে যাওয়ায় তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন না। নতুন বছরের শুরু থেকেই কঠোরভাবে টোল আদায় পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশের কপিও ইজারাদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নগর সংস্থাও রুলের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

স/আর