তুরস্কের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ছত্রভঙ্গ, ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তুরস্কের সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত  ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদুলু পোস্ট। একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে তারা। এদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মারমারিস থেকে ইস্তাম্বুলে ফিরতেই তার সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় অংশ নেওয়া বিদ্রোহী সেনাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে  বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তুরস্কের সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। গ্রেফতার হয়েছেন ৭৫৪ জন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এইসব খবর জানিয়েছে।

81d81d62eb7e25d55cf2035557c77177-5789b0ed4f532

সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টার সময় উপকূলীয় শহর মারমারিসে অবস্থান করছিলেন এরদোয়ান। শনিবার সকালেই ইস্তাম্বুলে ছুটে আসেন তিনি। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন যারা রাস্তায় ট্যাংকের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে তাদেরকে আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। অভ্যুত্থানকারী নেতাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরদোয়ান ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছাতেই সেখানে হাজার হাজার সমর্থকের দেখা মেলে। বিপুল জনস্রোতের মধ্যে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে ব্যর্থ হয় বিদ্রোহী সেনারা। আর সেখানে ফিরেই বিশ্বাসভঙ্গকারী সেনা সদস্যদের চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন এরদোয়ান। সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যে মারমারিসের অবকাশ কেন্দ্র ছেড়ে ইস্তাম্বুলে পৌঁছানোর পর এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সেইসঙ্গে সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোরও অঙ্গীকার করেন।

 

পরিস্থিতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে এরদোয়ানের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে আংকারা-ইস্তাম্বুল-সহ বড় বড় শহরগুলোতে এখনও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সেনা কর্মকর্তা। রয়টার্সের সাংবাদিক জানিয়েছেন, এমন ৩০ জনকে নিরাপত্তা বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

 

উল্লেখ্য, শুক্রবার মধ্যরাতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়,‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়,এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং কারফিউ ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে। কারফিউর বিরোধিতা করে এরদোয়ানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এরদোয়ানের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসা মানুষেরাএরদোয়ানের অভিযোগ, মারমারিস ছেড়ে আসার পর সেখানেও বোমা বিস্ফোরণ করেছে অভ্যুত্থানকারীরা। তিনি এখনও সেখানে অবস্থান করছেন ভেবেই অভ্যুত্থানকারীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন এরদোয়ান।

এর আগে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন (তুরস্ক)কে  মোবাইল ফোনে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, সেনা অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার প্রতিবাদে জনগণকে উন্মুক্ত জায়গায় নামতে হবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, খুব শিগগিরই অভ্যুত্থান চেষ্টার অবসান হবে। এর সঙ্গে জড়িতদের চড়া মূল্য দিতে হবে।

শুক্রবার তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার অংশ হিসেবে আংকারার পার্লামেন্ট ভবনে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর তুরস্কের টেলিভিশন জানিয়েছে, বিস্ফোরণে কয়েকজন পুলিশ অফিসার  ও পার্লামেন্ট কর্মী আহত হয়েছেন।

অভ্যুত্থানবিরোধী জনস্রোতএপির খবরে হতাহত ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো হয়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দা এপিকে বলেছেন, তিনি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। দালান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখেছেন। তবে সেই ধোঁয়া পার্লামেন্ট ভবনের কিনা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। ওই ব্যক্তি মাটির খুব কাছ দিয়ে ফাইটার জেট উড়ে যেতে দেখেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আংকারার বিমানবন্দরে হামলার খবর দিয়েছে। আর উইকিলিকস-এর টুইটার একাউন্ট থেকে তুরস্কের সেনা সদর দফতরে হামলারও খবর মিলেছে।