তাপমাত্রা বাড়িয়ে করোনার বিস্তার কমানো সম্ভব

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, তখন চীনের বেহাইং ও সিনঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক জানিয়েছেন, কৃত্রিমভাবে তাপমাত্রা বাড়িয়ে এই ভাইরাসের বিস্তার কমানো সম্ভব। এটা বিশ্বের যেকোনো স্থানের জন্যই প্রযোজ্য। তবে শুধু আবহাওয়া পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রকোপ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। চীনে যখন এ ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন সেখানকার তাপমাত্রা কম ছিল। চারদিকে ঠাণ্ডা আর কম তাপমাত্রার কারণে ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চীনে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায় দেখা গেছে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে কভিড-১৯ এর প্রকোপ কমছে। তবে গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণ তাপমাত্রা, তাপ এবং আর্দ্রতা কেবল ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে পারে; কিন্তু এটা ভাইরাসের বিস্তার একেবারে বন্ধ করতে পারে না।

গবেষকরা আরো বলছেন, শীতকালীন আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা, কাশি ও জ্বরের মতো উপসর্গগুলো বেড়ে যায়। এ সময় ভাইরাস খুব সহজেই বিস্তার লাভ করতে পারে এবং শরীরে হানা দিতে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে না।

এর আগে এক গবেষণায় বলা হয়, ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস টিকে থাকতে পারে না। চীনা গবেষকরা বলছেন, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে করোনার প্রকোপ কমার সম্ভাবনা বাড়ে। অর্থাৎ তাপমাত্রা যত বাড়বে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া তত ঠেকানো সম্ভব হবে।

তাপমাত্রা বাড়ায় গত সপ্তাহ থেকে চীনে এ ভাইরাসের প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে। এটা দেশটির জন্য অনেক বেশি ইতিবাচক। কারণ এর মধ্যেই সেখানে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

তিন মাস প্রাণপণ লড়াইয়ের পর করোনাভাইরাস এখন চীনে নিয়ন্ত্রণেই বলা যায়। টানা কয়েক দিন দেশটিতে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি। তার পরও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। কারণ বিদেশফেরত নাগরিকদের শরীরে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগিরই চীন আরেক দফা মহামারির মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একদল গবেষকও তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় বলছেন, বিশ্বের যে যে অংশে তুলনামূলক গরম বেশি, সেসব অংশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম।

গবেষকদলের একজন কাশিম বুখারি। তিনি বলেন, গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে করোনার প্রভাব তুলনামূলক কম। বিশ্বের যেখানেই তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। ইউরোপই এর অন্যতম উদাহরণ। বিশ্বের সেরা পরিষেবা থাকা সত্ত্বেও ইউরোপে শুধু তাপমাত্রা কম থাকায় আক্রান্তের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, টেক্সাসে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম; তুলনায় বেশি ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক ও কলোরাডোয়। ২০০৩ সালে সার্সের সময়ও এই একই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। তবে কভিড-১৯ একই আচরণ করবে কি না, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন গবেষকরা।