তানোর পৌরসভায় রাস্তা সংস্কারের ১ মাসেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং!

তানোর (রাজশাহী) :
রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় এলজিইডির অর্থায়ণে নগর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে রাস্তা সংস্কারের ১ মাসেই হাত দিয়ে টানলেই পিচ ও পাথর উঠে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মিলেমিশে এসব ভয়াবহ অনিয়ম-দূর্নীতি করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান পৌর এলাকার ৯টি রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্প কাজের টেন্ডার আহবান করেন। পরে এ কাজে ঠিকাদার নিযুক্ত হন রাজশাহী নগরীর আবুল হাসনাথ। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারী পৌর পরিষদ নির্বাচন ঘিরে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও ঠিকাদার মিলে অনিয়ম-দূর্নীতি করে সব রাস্তা ডাবলু বিএম ও প্রাইম বোর্ড করার পর আর কাজ তখন হয়নি।
সম্প্রতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তার দিকে গোকুল দরগাতলা মোড় থেকে তালন্দ বাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার (রিপিয়ারিং) পিচ ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন নবনির্বাচিত মেয়র ও তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমরুল হক। এভাবে পৌরসভার তালন্দ উপরপাড়া (বাহ্যাড়্যা), ধানতৈড় মোড় থেকে রফিকের বাড়ি, গুবিরপাড়া মহল্লার এই মাথা থেকে ওই মাথা হয়ে আহম্মদের বাড়ি থেকে সিন্দুকাই মাঠ, বাবুর গ্যারেজ থেকে তানোর (কুঠিপাড়া) পোস্ট অফিস, গোল্লাপাড়া বাজার থেকে ভিতরে মসজিদ, আমশো তাঁতিয়ালপাড়া আজাদের কারখানা থেকে আলফাজের বাড়ি ও কাশিমবাজার আক্কাচের দোকান থেকে ভদ্রখন্ড মসজিদ পর্যন্ত সবমিলে ২২শ মিটার রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার আবুল হাসনাথ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এসব কাজ শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ানো হয়। এতে এখনো শেষ হয়নি রাস্তা নির্মাণ কাজ। ফলে কোথাও রাস্তা খুড়ে আবার কোথাও ভারিবর্ষণে গর্তে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হওয়ায় ওইসব পাড়া মহল্লায় মানুষের চলাচলে দূর্গতি নেমে এসেছে। এমনতি ভুক্তভোগী মহল্লাবাসী।
অপরদিকে, চলতি অর্থবছরে পৌরসভার থোক (এডিপি) বরাদ্দের ৬০ লক্ষ টাকা কাজের পত্রিকায় কোন টেন্ডার আহবান করা হয়নি। মেয়র অতি গোপনে নিয়মের বাইরে কোটেশন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার নিজ ভাই রানা ছাড়াও আস্থাভাজন ব্যক্তিদের মাধ্যমে ড্রেন ও প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ ছাড়াও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিয়ে পৌরসভার থোক বরাদ্দের টাকা তসরুফ করছেন। তবে, এসব কাজের ওয়ান পারসেন্ট কমিশন পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নারী ও সাধারণ কাউন্সিলরগণ। এজন্য তারা নিশ্চুপ থাকছেন বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মচারী।
এবিষয়ে পৌরসভার প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনিয়ম-দূর্নীতি বা নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে, এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। মেয়র মহোদয় ফোন করে ডেকে ফাইলপত্রে স্বাক্ষর নেন। কিন্তু অনেক সময় ভারী যানবাহন ব্যবহারে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যেতে পারে বলে এড়িয়ে যান তিনি।
এব্যাপারে পৌর মেয়র ইমরুল হক বলেন, রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার আর নির্মাণে ভালমন্দ বোঝেন ইঞ্জিনিয়ার। কেউ ম্যানেজ হয়ে রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম-দূর্নীতি করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।