তানোরে মূল হোল্ডিংয়ে জমি না থাকলেও এলটি কেস পাস

তানোর প্রতিনিধি:

রাজশাহীর তানোরে মূল হোল্ডিংয়ে জমি না থাকলেও নাজির ও ভূমি অফিসের যোগসাজসে আদিবাসীর অন্তত ২০ কোটি টাকা মূল্যের জমি বিক্রয়ের এলটি কেস পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

এ ঘটনায় জমির ক্রেতা উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার আয়ড়া গ্রামের মৃত লোকমান আলীর পুত্র মনিমুল হক ও একই গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর পুত্র আশরাফুল ইসলাম এবং জমির বায়নাকৃত ব্যক্তি কৃষ্ণপুর গ্রামের এসলাম আলী এলটি কেস বলে জমি রেজিষ্ট্রী বন্ধের দাবিতে বুধবার তানোর সাব-রেজিষ্ট্রার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

 

আদিবাসীর কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি জালিয়াতি ভাবে এলটি কেস পাস করার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় দেখা দেয় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করেননি সাব-রেজিষ্ট্রার সিং মং থোয়াই। এতে করে এলটি কেসের বলে জমি রেজিষ্ট্রী হলে অতীতের ক্রেতারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়বেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। ফলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নাজির এস এম মুনতাজুর রহমানের এমন কর্মকান্ডে এলাকায় পড়েছে হৈ চৈ।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আয়ড়া মৌজার ৬৫, ৬৬ ও ৬৭ নং আর.এস খতিয়ানে ১৯৫, ১৯৬, ১৮৭ ও ১৯৩ আর.এস দাগে মোট জমি রয়েছে ১.৯৫ শতাংশ। রেকর্ডীয় মালিক ডেমরা মাঝি দিং। তার নিকট হতে ওই এলাকার আয়ড়া গ্রামের মনিমুল, আশরাফুল সহ বেশ কিছু ব্যক্তি অন্তত ২০ বছর আগে পর্যায়ক্রমে জমি ক্রয় করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন এবং একই জমির বাঁকি কিছু অংশ বিক্রির জন্যে কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত জাবের আলীর পুত্র এসলাম আলী ০৮/১১/২০১৬ ইং সালে রেকর্ডীয় মালিক ডেমরা মাঝির পুত্র লালমন হেমরম ও এসাহাক হেমরম এবং লগেন হেমরম বায়না বাবদ ৬ লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু মূল হোল্ডিংয়ে এসলাম খোঁজ নিয়ে দেখে রেকর্ডীয় মালিকের নামে কোন জমিই নেয়। অথচ তানোর ভ’মি অফিসের নাজির এস এমমুনতাজুর রহমান যোগসাজস করে আয়ড়া গ্রামের মৃত জেকের আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম (আলম) ও একই গ্রামের আব্দুল জব্বাবের পুত্র রফিকুল ইসলাম ওই সকল ব্যক্তির কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকায় জমি ক্রয় করবেন মর্মে এডিসি (রাজস্ব)রাজশাহী নিকট মৃত ডেমরা মাঝির পুত্রদের দিয়ে আবেদন করেন।

 

আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার(ভূমি)ও নাজির যাচাই বাছাই ছাড়াই অঞ্জাত কারনে গত ১৫/০২/২০১৭ ইং তারিখে ২১৭ নং স্মারকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন ও কেস নথি রেজিষ্ট্রী করনের চিঠি পাঠান এডিসি(রাজস্ব) রাজশাহীতে। তার প্রেক্ষিতে ১৫৫-১৬ এলটি কেসের আদেশটি ২৩৬(৩) নং স্মারকে ০৭/০৩/২০১৭ ইং তারিখে অনুমোদন দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। এলটি কেসের অনুমোদনটি বুধবার সকালে রেজিষ্ট্রী অফিসে পৌঁছে। অথচ মূল রেজিষ্ট্রার(রর) এ খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ডেমরা মাঝির নামে কোন জমি নেই। তারপরও সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের মুহুরী আব্দুস সালাম খাজনার চেক জালিয়াতি করে রেজিষ্ট্রী করার পায়তারা করেন। মুহুরী সালাম জানান, জমির সমস্যাদি থাকার কারণে রেজিষ্ট্রী হয়নি।

 

এ নিয়ে আশরাফুল জানান, আমরা অন্তত ১০-১২ জন ব্যক্তি দীর্ঘ ২০-২৫ বছর আগে মূল মালিকের নিকট থেকে অন্য কিছু ব্যক্তি জমি ক্রয় করেন। তাদের নিকট থেকে আমরা ক্রয় করে নিয়মিত খাজনা খারিজ দিয়ে আসছি। যাহার খারিজ কেস নং-১৮৭/৯-১/১৯৭৭-১৯৭৮, ২০৪/৯-১/২০০৩-২০০৪ ও ২২৫/৯-১/২০১৪-২০১৫। কিন্তু তহশীলদার ও ভূমি অফিসের কিছু ব্যক্তি মোটা অংকের টাকা নিয়ে সবকিছু গোপন করে ১৫৫/১৬ নং এলটি কেস পাস করেন। হোল্ডিংয়ে জমি না থাকলেও কীভাবে এলটি কেস পাস হয় সেটা বুঝে নিতে হবে।

আদিবাসী লালমন হেমরম সহ তারা জানায় আমাদের বাবার জমি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত আমরা। কীভাবে বিক্রি হলো এটা আমাদের অজানা ছিল। তবে এসলামের কাছ থেকে বায়না বাবদ তিন লক্ষ টাকা নেয়া  হয়েছে।

এনিয়ে মুন্ডুমালা তহশীল অফিসের তহশীলদার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মূল হোল্ডিংয়ে জমি নেই এটা সত্য। তাহলে কীভাবে এলটি কেস পাস হয় জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে তিনি বলেন এ সংক্রান্ত খাজনার কোন চেক দেয়া হয়নি।

তানোর সাব-রেজিষ্ট্রার সিং মং থোয়াই বলেন, অভিযোগ পেয়েছি কিন্তু দলিল রেজিষ্ট্রীর জন্যে এখনো কেউ আসেনি। তবে আসলে খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

সহকারী কমিশনার ভূমি নিলফা ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হোল্ডিংয়ে জমি না থাকলে এলটি কেস পাস হওয়ার কথা না। বাদীদেরকে কাগজপত্র নিয়ে ডাকা হয়েছে। মূল হোল্ডিংয়ে জমি না থাকলে কীভাবে এলটি কেস পাস হলো জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কাগজপত্র না দেখে এ মুহূর্তে কিছুই বলা সম্ভব না।

তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির্জা আব্দুস সালাম জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/শ