ঢাবির শিক্ষার্থী বহিষ্কার: অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাই কাম্য

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬৭ শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যথার্থ।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলার চেষ্টা করছি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন মানুষ তৈরি করবে, যারা চিন্তায়, মননশীলতায়, বিবেকে, রুচিতে ও সৃজনশীলতায় শ্রেষ্ঠ বলে পরিগণিত হবে। বহিষ্কৃতরা নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিলেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অপরাধীর স্থান হতে পারে না- এ কঠোর বার্তাটিই দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করব, কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।

দুঃখজনক হল, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নয়; সাম্প্রতিক সময়ে বিসিএস থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা, এমনকি স্কুল পর্যায়ে দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।

বস্তুত প্রশাসনের একটি অসাধু চক্রকে ‘ম্যানেজ’ করে কিংবা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনকে সম্পৃক্ত করে বছরের পর বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁসের মতো অপকর্মটি করা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে বেকারত্বের যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সৎ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে যেমন তামাশা করা হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতা ধ্বংসের বন্দোবস্তও পাকা করা হচ্ছে।

এসব বন্ধ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আন্তরিক হতে হবে। প্রশ্ন ফাঁস যে কেবল অপরাধ নয়, একইসঙ্গে নৈতিকতাবিরোধী- প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে এ বোধ জাগ্রত করাও জরুরি।

একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিল। এই সুনাম ও মর্যাদা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। দুঃখজনক হল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনোকিছুই আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এর কারণ বহুবিধ।

সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি ইত্যাদি ছাড়াও লেজুড়বৃত্তির ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব পড়ছে সবকিছুতে। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে শিক্ষক ও অন্যান্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রাধান্য পায় দলীয় বিবেচনা।

এর ফলে দলের প্রয়োজনে অনেকে লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতেও দ্বিধা করেন না। এ বাস্তবতায় কেবল প্রশ্ন ফাঁস নয়, সব ধরনের অনিয়ম-নৈরাজ্য রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোরতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।