ঢাবি’র মেধাবী ছাত্র সাজ্জাদকে অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিলেন ইউএনও শিমুল আকতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র, বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্ৰহণ করার নির্দেশনা প্রদান করেছে।

অনলাইনে পরীক্ষা প্রদানের জন্য আমার একটা অনলাইন ডিভাইস (মোবারক ফোন) দরকার ছিল। গত পাঁচ মাস আগে আমার বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।

দীর্ঘ দিন লকডাউনের ফলে কর্মহীন অবস্থায় অসুস্থ মাকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। তাই এই দুঃসময়ে অনলাইন ডিভাইস কেনা আমার পক্ষে অসম্ভব। অবশেষে আমি পবা উপজেলা ইউএনও স্যারের শরণাপন্ন হয়।

তিনি আমাকে অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার জন্য একটি মোবাইল ফোন দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় অনলাইন ডিভাইস গ্ৰহণের সময় একথা জানান সুবিধাভোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র মেধাবী ছাত্র সাজ্জাদ আলী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াসিন আলী, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শিমুল আকতার, সহকারী কমিশনার ভূমি শেখ এহসান উদ্দীন প্রমুখ।

তিনি আরও জানান, পবা উপজেলার বড়গাছী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত. ছমির থান্দার আমার পিতা। ভিটাবাড়ি ছাড়া কোন জায়গা-জমি না থাকার কারণে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিলাম। নওহাটা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি ও নওহাটা ডিগ্ৰী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফর্ম পূরণ করার মতো টাকা ছিল না, তাই বন্ধুদের সহযোগিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শুরু করি। তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের ফলে দীর্ঘদিন থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের কোমনমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অনলাইনে পাঠদানের সু্যোগ করে দিয়েছেন।

কিন্তু দারিদ্র্যতার কশাঘাতে জর্জরিত আমার জীবন, তাই আমার কাছে অনলাইনে ক্লাশ করার মতো কোনো ধরনের অনলাইন ডিভাইস নাই। তিনি আরো জানান, বাধ্য হয়ে কোন উপায় না দেখে পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতার মহোদয়ের নিকট আবেদন করি। তিনি দ্রুততম সময়ে মধ্যে আমাকে একটি মোবাইল ফোন দিয়েছেন। সে জন্য আমি ইউএনও মহোদয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়াও তিনি আরো জানান, ‘ইউএনও স্যারের এমন মহানুভবতায় আমি অত্যন্ত খুশি। তিনি আমার অসহায় অবস্থার কথা জানতে পেরে আমাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সহায়তা করেছেন। এমনকি আমার পরবর্তী সময়েও তিনি সহায়তার কথা জানিয়েছেন। ইউএনও স্যারের উৎসাহে আমার অনেক কষ্ট লাঘব করেছে। কারণ আমি পরীক্ষার বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। আমি এখন অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়ে উৎসাহিত। সবার দোয়া থাকলে আমি পরীক্ষায় ভাল ফল করব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সুবিধাভোগী সাজ্জাদ।’ সম্প্রতি অদম্য মেধাবী সাজ্জাদের কথা পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতার জানতে পারেন।

তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই অসহায় ছাত্রের জন্য সহায়তার কথা বলেন। ওই ছাত্রের প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজখবর নেন এবং তার উচ্চ শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সাজ্জাদকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আরো জানান, তিনি সব সময়েই চেষ্টা করেন অর্থাভাবে যেন কারো লেখাপড়া বন্ধ না হয়।

তিনি বলেন, পবায় অর্থাভাবে কারো পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয় সেটি তিনি নিশ্চিত করতে চান। তিনি জানান, পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি অর্থাভাবে ছেলেটির লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছিল। তিনি জানান, এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আমার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হ’ল- আমার ব্যক্তিগত ও সরকারি সহযাগিতায় দরিদ্র ছাত্র- ছাত্রীকে সহায়তা করব। যাদের অর্থাভাবে পড়াশোনা বিঘ্নিত বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, তাদের এটুকু সাহায্য করে তাদের প্রতিভার কিছুটা স্বীকৃতি দিতে পারছি। তারাও একদিন প্রতিষ্ঠিত হলে অনেককে সহায়তা করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউএনও।

 

স/এআর