ঢাকা থেকে এসেছে করোনা হতে পারে শুনে বাঘায় ৩টি বাড়ি স্থানীয়দের লকডাউন

আমানুল হক আমান:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা বাজারের পাশে শহীদুল ইসলামের বাড়ি। এই বাড়ি থেকে মুরগি বিক্রি করেন সে। বাড়ির বাইরে একটি মুরগির খাঁচা থাকে। কেউ কিনতে এলে শহীদুল সেখান থেকে মুরগি বিক্রি করে।

ছেলে ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছে শুনে স্থানীয় কেউ ছড়িয়ে দিয়েছে তার ছেলে করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত হয়েছে। তারপর স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বর ও রাজনৈতিক নেতারা তার বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। শুধু তাঁর বাড়ি নয়, তার জামাই এবং ভায়রার বাড়িও লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) উপজেলার দিঘা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

ওই দিন রাতে শহীদুলের বাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়েছে। কে ঢিল ছুড়েছে শহীদুল তা বলতে পারেনি। ভয়ে আতঙ্কে তারা ৩ দিন ধরে বাড়ির বাইরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে চুপ করে রয়েছেন।

শহীদুল মোবাইল ফোনে জানান, তার ছেলে ডুয়েটে পড়াশোনা করে। ছুটির কারণে সে বাড়িতে এসেছে। গত মঙ্গলবার তার একটু জ্বর-জ্বর মনে হয়েছিল। সে দিঘা বাজারে একটি ওষুধের দোকানে ওষুধ আনতে গিয়েছিল। তারা আর কিছুই জানেন না।
তারপর তার বাড়িতে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বর, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসে বাড়ির ভেতরে থাকার নির্দেশ দেন। তার জামাইয়ের দিঘা বাজারে একটি ওষুধের দোকান আছে। তার বাড়ি দিঘা হাজিপাড়া। তাকেও বাড়ির বাইরে না আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার ভায়রার বাড়ি দিঘা পশ্চিমপাড়া। তাকেও বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই দিনই মসজিদের মাইক থেকে চৌকিদার ঘোষণা দেন যে শহীদুলের ছেলের করোনা হয়েছে। তারা যেন বাড়ির বাইরে না আসতে পারে। তার বাড়ি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে তার ছেলে কান্নাকাটি শুরু করেন। তার তেমন কিছুই হয়নি।

এর পরে সরকারি ডাক্তার এসে দেখে গেছে। তার ছেলের গায়ে জ্বর নেই। তারপরেও তারা বাড়ির বাইরে বের হতে পারছে না।
শহীদুল আরো তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকেই মুরগি বিক্রি করি। গত ১৭ মার্চ থেকে মুরগী বিক্রি বন্ধ করে করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আবার বাড়িতে ঢিল পড়ছে। কী বিপদের মধ্যে পড়েছি শুধু আল্লাই জানেন। তিনি বলেন, আমার মা অন্য ভাই এর বাড়িতে থাকতো। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বয়সেরভাবে মৃত্যু হয়েছে। লকডাউন করে দেয়ার কারনে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে কোনমতে দাফন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাউসা ইউনিয়নের ১ নম্বর দিঘা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ওষুধের দোকান থেকে শুনে এসে একজন স্কুল শিক্ষক আমাকে বিষয়টি জানান, শহীদুলের ছেলের নাকি জ্বর। তার করোনাও হতে পারে। এই জন্য সঙ্গে সঙ্গে বাজার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। চৌকিদার মসজিদের মাইকে তাদের বাড়ি থেকে না বের হতে ঘোষণা দেয়। তার ভায়রা ও জামাইয়ের বাড়ির লোকজন তাদের বাড়িতে এসেছে এজন্য ওই দুই পরিবারকে বাড়ি থেকে বাইরে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি সিভিল সার্জনকে ফোন করে জানানো হয়েছে। সেখানে থেকে চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে দেখেছেন। ছেলের জ্বর কম। করোনা হয়নি। ৬-৭ দিন বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, স্থানীয় বাউসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বিষয়টি জানিয়েছে। দিঘার মুরগি ব্যবসায়ীর ছেলের জ্বর, সর্দি, কাশি ও আমাশয় হয়েছে। এই জন্য তাদের কয়েকদিন বাড়ির বাইরে না আসার জন্য বলা হয়েছে। তবে তাদের কেউ গৃহবন্দী করে রাখেনি।

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, তেমন কিছু না। সামান্য একটু গা গরম হয়েছিল শহীদুলের ছেলের। ডাক্তার ডেকে দেখানো হয়েছে। বুবধবার সকালে চৌকিদার পাঠিয়ে খবর নেয়া হয়েছে জ্বর নেই। ছেলেটা ১৮ মার্চ ঢাকা থেকে এসেছে এজন্য তিনি একটু বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। বাইরে সবাই আতঙ্কে রয়েছে। এই জন্য এই টুকু বলা। ঢিল ছোড়ার বিষয়ে জানা নেই।

স/অ