সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসন, জনভোগান্তি দূর ও রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সোমবার ধর্মঘট ডেকেছে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক-পরিবহন ইউনিয়ন। কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
এর পরও যানজট নিরসন না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে তিন ঘণ্টার জন্য এ রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
বাস মালিক সমিতির মহাসচিব কফিল উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, আশা করি আমাদের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশাসন সমস্যা নিরসনে আন্তরিক হবেন।
উল্লেখ্য, গত চার দিন ধরে তীব্র যানজটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। মাইলের পর মাইল সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে শনিবার কুমিল্লা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার অচল মহাসড়কে লাগাতার ৭০ ঘণ্টা যানজটে অচল হয়ে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা। শনিবার অনেকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন ছয় ঘণ্টার স্থলে ৪০ ঘণ্টায়, শুক্রবারে যাত্রা করা অনেকে এখনও পথেই আটকা রয়েছেন। কেউ হেঁটে কিছু পথ পাড়ি দিয়ে ছোট গাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, কেউ রেলস্টেশন খুঁজে নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার কেউ উল্টো পথে ফের ভোগান্তি মাড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
অবর্ণনীয় দুর্ভোগে অনেক মহিলা ও শিশু পথিমধ্যে খাবার এবং শৌচাগার সংকটে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সবার অভিযোগ ফেনীর নির্মাণাধীন রেল ওভারপাসের স্থলে ভাঙাচোরা সংকীর্ণ সড়কই দায়ী এ দীর্ঘ যানজটের জন্য।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী ট্রাকচালক আমিনুর রসুল (৫০) বলেন, চৌদ্দগ্রাম থেকে মীরসরাই পর্যন্ত এই এলাকা পার হতে আগে সময় লাগত সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আর এবার লাগল ৩২ ঘণ্টা। শুক্রবার সকাল ৮টায় চৌদ্দগ্রাম প্রবেশ করার পর থেকে যানজটে থেমে থেমে এসে মিরসরাই পার হচ্ছিল যখন, তখন শনিবার বিকাল ৪টা।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ইউনিক পরিবহনের যাত্রী চৌধুরী বোরহানউদ্দিন বলেন, ঢাকা থেকে তিনি শুক্রবার ভোরে রওনা হয়েছেন। যানজট শুনে বাসচালক কুমিল্লা বিশ্বরোড হয়ে লাকসাম, নোয়াখালী, চৌমুহনী, ফেনী, লালপুল হয়ে শত কিলোমিটার বাড়তি ঘুরে পথে এসে ও মিরসরাই পার হতে হয়েছে শনিবার সকালে। ২৪ ঘণ্টায় ও পথের শেষ করতে পারেননি তিনি।
হাইওয়ে পুলিশ ও মিরসরাই, জোরারগঞ্জ ও সীতাকুণ্ড থানার সব পুলিশকে এ রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকতে দেখা গেছে। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে কোনো কোনো অংশে কিছুটা সচল হলেও পুনরায় যানজট লেগে যেতে দেখা গেছে।
এই বিষয়ে ফেনী ফতেপুর লেভেল ক্রসিং এ নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ব্রিগেডিয়ার রেজাউল মজিদ শনিবার যুগান্তরকে জানান, এখানে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটির ১৫ মে অবমুক্ত করা হবে। তখন থেকে আর যানজট থাকবে না। তবে বর্তমানে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য আমরা দ্রুত সার্ভিস রোডটি সংস্কার করছি। এ ছাড়া ফেনী শহরের মধ্যবর্তী বিকল্প সড়কটি চালুর ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতির অবসান হবে।
তবে তিনি ফেনী শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ দুর্ভোগের বিষয়ে ফোর লেনের চট্টগ্রাম অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জুলফিকার আলী দায় স্বীকার করে বলেন, সৃষ্ট এমন পরিস্থিতি পূর্বে আর কখনও হয়নি। ফেনীর নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের সার্ভিস রোডটি দ্রুত প্রশস্ত ও গর্তমুক্ত করে দিলেই এই সংকটের উত্তরণ সম্ভব।
সওজ ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, আমরা ইতিমধ্যে স্টার লাইন সেন্টার- ফেনী শহর টু লালপোল সড়কটিকে দ্রুত সংস্কার করে সচল করেছি। এখানে ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেনীর রেলগেট ছাড়াও আরও ১০ কিলোমিটার এলাকা শিগগিরই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। যুগান্তর