ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নাই রাসিকের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। রাজশাহী হাসপাতালেও প্রতিদিন বাড়ছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। আর এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী তেমন উদ্যোগ না নিয়ে সচেতনতামূলক কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আঞ্জুমারা বেগম সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, রাসিক এলাকায় এডিস মশা রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ১১জন রোগি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে এসেছেন ৯জন। আর বাকি দু’জন নগরীর।

মশা নিধনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সচেতনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তাই বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছেন। এছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে রাসিকের আওতায়ধীন সকল স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি।

মশা নিধনের ফগার মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের কথা ভেবে এ মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে খুব জরুরী হলে ব্যবহার করা হবে পারে।’

এর মধ্যে রয়েছে সভা-সেমিনার, র‌্যালী, ওয়ার্ড পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা নগরবাসীকে সচেতনত করাসহ সপ্তাহব্যাপী নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগবাহী মশক নিধনে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। এ নিয়ে নগরবাসীর মাঝে আতঙ্ক আরো বাড়ছে।

সরেজমিন রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এ বছর নগরীর কোথাও ফগার মেশিনের সাহায্যে মশক নিধনে কীটনাশক ছেটানো হয়নি। ফলে নগরীর ড্রেন থেকে শুরু করে, ছোট ছোট ডোবা ও পানি জমে থাকা স্থানগুলোতে মশারা ঘর-বাড়ি বানিয়ে রেখেছে। মশার অত্যাচারে নগরবাসী দিনের বেলাও মশারি টানিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রতিদিন রাজশাহী হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আবার মিডিয়ায় খবর আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর। এসব খবরে রাজশাহী নগরবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে ডেঙ্গু নিয়ে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে চরম আতঙ্কিত নগরবাসী।

জানতে চাইলে নগরীর সাধুর মোড় এলাকার বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, ‘প্রতিদিন টিভি খুললেই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। রাজশাহীতেও নাকি ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। কিন্তু মশা মারার জন্য তো সিটি করপোরেশন থেকে কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সিটি করপোরেশনের ড্রেনগুলোও ঠিকমতো পরিস্কার হয় না এ কারণে মশারা বংশবিস্তার করছে ব্যাপক হারে। রাত-দিন মশার অত্যাচারে টেকাই দায়। এই অবস্থা লতে থাকলে দ্রুত রাজশাহীতেও ডেঙ্গু হয়তো ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে।’

নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার স্টেডিয়ামের চারিদিকে ময়লা-আবর্জনা ও জঙ্গলে ভরা। এগুলো পরিস্কারেরও কোনো উদ্যোগ দেখি না। আবার ড্রেনগুলো বর্ষার পরে তো পরিস্কারই করা হয়নি। ফলে মশার অত্যাচার বেড়েছে ব্যাপক হারে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগবাহী মশার বিস্তার হচ্ছে কিনা বলতে পারব না।

নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মশার অত্যাচারে দিনের বেলাতেও ঘুমাতে হয় মশারি টাঙ্গিয়ে। কিন্তু মশা মারার জন্য আগে যেখানে কীটনাশক স্প্রে করা হত, এখন বছরেও দেখা যায় না। এ বছর তো চোখেই পড়েনি। ড্রেনগুলোতে মশাদের কারণে তাকানো যায় না। মশারা ভিন ভিন করে। এগুলোই বাসাবাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছে মানুষের শরীরে। বাড়ছে রোগ-বালাই।’

তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আর্থিক সঙ্কট ও নগরবাসীর স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে মশক নিধনে ফগার মেশিনের সাহায্যে স্প্রে করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন রাসিকের বর্জ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্যানেল মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু। তিনি গতকাল বলেন, ‘মশক নিধনে ফগার মেশিনের সাহায্যে স্প্রে করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এতো টাকা আমাদের কাছে নাই। তবে মশার লাভা নিধনের জন্য আমরা নিয়মিত খোলা ড্রেনগুলোতে ওষুধ স্প্রে করে থাকি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছে। নগরীর মসজিদগুলোতে ইমামের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা রাজশাহী সব সেক্টরের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা করেছি। সচেতনতা সৃষ্টিতে র‌্যালীও করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানও চলছে।’

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র মতে, এই হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত ৩৭ জন রোগী এ রোগে আক্রান্ত হেয় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আর দুজন রোগীর অবস্থা শঙ্কটাপন্ন। তাদের হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম।

 

স/আর