জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ

ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের বাসায় বারবার গৃহকর্মী নির্যাতন কেন?

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে, কেন তারা বারবার গৃহকর্মী নির্যাতনের সঙ্গে জড়াচ্ছেন।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালের দিকে মোহাম্মদপুর শাজাহান রোড ২/৭ বাড়ির নিচতলা থেকে গৃহকর্মী প্রীতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন। চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ওই ভবনের নবমতলায় থাকে থাকেন ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক। প্রীতি তাদের গৃহকর্মী।

এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা থেকেই ফেরদৌসী নামে সাত বছর বয়সী এক গৃহকর্মীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তখনও আশফাকুলের নামে মামলা হয়েছিল।

প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় ওইদিনই সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত অনুমতি দেওয়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

পুলিশ ও কারাগার সূত্র জানায়, গত ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের বাসায় বারবার কেন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তা জানার জন্যই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই গৃহকর্মীকে কেন হাত বেঁধে বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল তারও ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের কাছে।

পুলিশ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে। তদন্তে সরাসরি হত্যার প্রমাণ বা যে কোনো কারণ পাওয়া গেলে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্প সংলগ্ন ২/৭ বাড়ির নবমতলা থেকে পড়ে মারা যায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫)। জানা গেছে, প্রীতির গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পড়ে যাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল প্রীতি। কিন্তু একসময় সে পড়ে যায়। দ্রুত ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা প্রথমে দরজা খুলতে চাননি। পাশের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনাসসহ আরও কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

প্রীতিকে জানালা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ আশফাক, তানিয়াসহ তাদের পরিবারের ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং।

প্রীতির মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাদিয়া। তিনি রিপোর্টে প্রীতির শরীরে নতুন ও পুরোনো কিছু দাগের কথা উল্লেখ করেছেন।

ঘটনার পর প্রীতির বাবা যেসব অভিযোগ তুলেছেন তাতে অনেক প্রশ্ন উঠে আসে। তিনি বলেন, দুই বছর আগে মিন্টু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিক আশফাকুল হকের বাসায় প্রীতিকে তিনি কাজে পাঠিয়েছিলেন। গত দুই বছরে মেয়েকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। শুধু মাসে দু-এক তারা ফোনে কথা বলিয়ে দিতেন।