ডাকের ভোটেই ডুবছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার করোনাভাইরাসের কারণে রেকর্ড পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে। এর একটা বড় অংশই মেইল ইন ব্যালট বা ডাকযোগে আসা। এই ভোটগুলো গোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।

ভোটের দিন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোট গোনা শুরু হওয়ার পর গোড়ার দিকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন পুনর্নির্বাচনপ্রত্যাশী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় তিনি জয়ের ঘোষণাও দিয়ে দেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্য ঝুলে যায় আগাম ভোট গোনা শুরু হওয়ার পর।

যুক্তরাষ্ট্রে এবার মোট ভোট পড়েছে ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ; ১৬ কোটি। এর মধ্যে আগাম ভোটই ১১ কোটি। আগাম ভোট দেওয়া হয় দুইভাবে। প্রথমত, ডাকযোগে ভোট; আর রয়েছে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া। অতীতেও এগুলোর চল ছিল। ডাকযোগে ভোট দিতেন তাঁরা যাঁদের পক্ষে কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়া কঠিন। মূলত একে অ্যাবসেন্ট ব্যালট বা অনুপস্থিত ভোট বলা হয়। অসুস্থ বা বিদেশে থাকা মার্কিন নাগরিকরা এভাবেই ভোট দেন। আর ভোটের দিন ব্যস্ত থাকবেন বা কেন্দ্রে গিয়ে ঠেলাঠেলি করতে চান না—এমন ব্যক্তিরা নির্বাচনের আগেই কোনো এক দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসেন। আগাম ভোট যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কিছু নয়।

তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক নতুন বাস্তবতার জন্ম হয়েছে। অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ অতিমাত্রায় বেশি। গত আট মাসে কভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দুই লাখ ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে। এ ভাইরাসের কারণেই এবার আগাম ভোটের সংখ্যা ধারণার চেয়ে বেশি। আর আগাম ভোটের মধ্যেও বেশি পড়েছে ডাকযোগে ব্যালট। ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে ছয় কোটি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহু আগে থেকেই আগাম ভোটের এই অংশটি নিয়ে চিন্তিত। তাঁর আশঙ্কা ছিল, জালিয়াতি হলে ডাকের ভোটেই হবে। তিনি কখনো এ অভিযোগ করতে পিছপা হননি। তবে সংকট হলো, কখনোই কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। আর যুক্তরাষ্ট্রে ডাকযোগে ভোট জালিয়াতির অতীত অভিযোগও নেই।

ট্রাম্প অবশ্য হাল ছাড়েননি। আগাম ভোট কী পরিমাণ পড়তে পারে তার আভাস পেয়েই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন তিনি। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসের প্রধানকে পাল্টে তাঁর ঘনিষ্ঠ লুই ডিজয়কে নিয়োগ দেন। জানা গেছে, এপ্রিল-জুন মাসে পোস্টাল সার্ভিসের ডাক চালাচালির সক্ষমতা ছিল ৯৫-১০০ শতাংশ। অক্টোবরের গোড়া থেকেই তাদের সেই সক্ষমতায় ধস নামে। ৬৫ শতাংশ থেকে রাজ্য বিশেষে ১৮ শতাংশে নেমে আসে ডাক চালাচালির সক্ষমতা। তবে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এ চেষ্টা ট্রাম্পকে রক্ষা করতে পারেনি। বেশির ভাগ রাজ্যেই ডাকে ব্যালট আসার সময় বাড়িয়ে দেয়। ফলে ধীর গতিতে হলেও ব্যালটবাহী চিঠি নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাচ্ছে। গণনা চলছে এবং সেই গণনাতেই ক্রমেই এগিয়ে চলেছেন বাইডেন। আর ডাকের ব্যালটেই যুক্তরাষ্ট্রের অঘোষিত নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এখন জো বাইডেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ