ঘোষণার অপেক্ষায় বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়রের নির্বাচিত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মঞ্চ-আতশবাজি প্রস্তুত, অপেক্ষা শুধু চূড়ান্ত ঘোষণার। যদিও ছয়টি অঙ্গরাজ্যের ফলাফল এখনো বাকি। এর মধ্যে কয়েকটির ফল পেতে আরো কয়েক দিন লেগে যাবে। তবে ফল ঘোষণার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মূল রাজ্যগুলোতে বাইডেনের লেখচিত্র ঊর্ধ্বগতিতে ছুটছে। ঠিক একই বেগে নিম্নগামী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রেখা। ডাকযোগে আসা ব্যালট তাঁর কপাল পুড়িয়েছে। ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা না করেই ‘বড় ধরনের কারচুপি’র অভিযোগ করেছেন রিপাবলিকান পার্টির পুনর্নির্বাচনপ্রত্যাশী প্রেসিডেন্ট। বাইডেনের কাছে পরাজয় মেনে নেবেন না, আভাস দিয়ে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে সবার প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ভোট গণনা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছেন বাইডেন। এরই মধ্যে ফেডারেল সরকার তাঁর জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। ডেলাওয়ার রাজ্যের উইলমিংটনে তাঁর বাসভবনের ওপর দিয়ে বিমান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ নানা পরামর্শকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন তিনি।

ইলেকটোরাল কলেজের হিসাব অবশ্য প্রায় একই জায়গায় স্থির। তাতে বাইডেন ২৫৩-২১৩ ভোটে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে। মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্সি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন ২৭০টি ভোটের। অঙ্কের হিসাবে এখনো খানিকটা পিছিয়ে আছেন বাইডেন। এ কারণেই চোখ রাখতে হবে রাজ্যগুলোর ভোটগণনার গতি-প্রকৃতির দিকে। গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৪৪টি রাজ্যের ফল সুস্পষ্ট। সবই বেসরকারি, চূড়ান্ত ফল জানা যাবে ২১ নভেম্বর। বাকি আছে আর ছয়টি রাজ্য—আলাস্কা (৩), আরিজোনা (১১), নেভাডা (৬), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫), জর্জিয়া (১৬) ও পেনসিলভানিয়া (২০)। এর মধ্যে জর্জিয়ায় ভোট পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আলাস্কা : লাল রাজ্য অর্থাৎ রিপাবলিকান পার্টির কট্টর সমর্থক এর ভোটাররা। ২৯ অক্টোবরের পর আসা আগাম ভোট গতকাল পর্যন্ত গণনাই শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহে ডাক খুলবে তারা। তবে তিন ইলেকটোরালের এ  রাজ্য এখন আর মূল ভোটগণনায় খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না।

আরিজোনা : ৯০ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন। ৪৭ হাজার ভোটে এগিয়ে বাইডেন। রাজ্যের দুই কাউন্টিতে ভোট গোনা বাকি দুই লাখ চার হাজার। শুক্রবার রাতের মধ্যেই আরিজোনার ফল ঘোষণা করার কথা।

জর্জিয়া : ৯৯ শতাংশ ভোট গোনা সম্পন্ন। দেড় হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন বাইডেন। স্বল্প পার্থক্যে পুনর্গণনার আশঙ্কা বাদ দেওয়া যায় না। এ রাজ্যে ডাকের ব্যালট গ্রহণ করা হবে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত। শর্ত হচ্ছে, তাতে নির্বাচনের দিনের সিল থাকতে হবে, অন্যথায় ভোট বাতিল।

দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান খুব কম থাকায় ভোট গণনার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনস্পারগার। পুরো রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার এ সিদ্ধান্তের পর ফল পেতে নভেম্বরের শেষ পর্যায় চলে আসবে বলে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

নেভাডা : এখানেও ২০ হাজার ৫৪২ ভোটে এগিয়ে আছেন বাইডেন। গোনা হয়েছে ৯২ শতাংশ ভোট। এ রাজ্যে ডাকের ব্যালট নেওয়া হবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। শর্ত জর্জিয়ার মতোই।

নর্থ ক্যারোলাইনা : ৯৫ শতাংশ ব্যালট গোনা সম্পন্ন হয়েছে। ট্রাম্প প্রায় ৭৭ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন। ১৫ ইলেকটরের এ রাজ্যে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ডাকের ভোট গ্রহণ করা হবে। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে সে পর্যন্ত। পাশা ওল্টানোর সম্ভাবনা প্রবল।

পেনসিলভানিয়া : গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা পর্যন্ত এ রাজ্যে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এ রাজ্যের ভোটের প্রবণতা বুঝতে আগের দিনের ভোটের ব্যবধানের তথ্যটিও জানতে হবে। বৃহস্পতিবার দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ছিল দুই লাখ। ডাকের ভোট গণনা শুরুর পর থেকে চিত্র পাল্টাতে থাকে। আরো ২৫ হাজার ব্যালট গণনা বাকি। এতে সময় লাগবে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কারণ এই ব্যালটগুলোতে ভোটারদের নাম ও বৈধতা পরীক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার প্রায় শেষ সময়ে এসে এই রাজ্যটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ এ রাজ্যে জিতলেই বাইডেনের হাতে হোয়াইট হাউসের চাবি আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে পেনসিলভানিয়া ছাড়া ট্রাম্পের পক্ষে হোয়াইট হাউস ধরে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

জালিয়াতির অভিযোগ ট্রাম্পের
টানা ৩৬ ঘণ্টা পর মিডিয়ার সামনে এসে ‘ভোট জালিয়াতি’র অভিযোগ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘অর্থ, মিডিয়া আর প্রযুক্তির জোরে’ তাঁর কাছ থেকে ‘নির্বাচন হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে’ বলেও দাবি করেন। বৃহস্পতিবার রাতে ১৭ মিনিটের সংক্ষিপ্ত অথচ উত্তেজক বক্তব্যে বড় ধরনের ভোট চুরির অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, বৈধ ভোট গোনা হলে তিনি হেসেখেলে জয় পেতেন। বিস্ময়করভাবে এবিসি, সিবিএস ও এনবিসির মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির টিভি চ্যানেল বক্তব্যের মাঝপথে সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট অসত্য বলছেন। মিথ্যার তথ্য-প্রমাণও তুলে ধরে তারা। ট্রাম্প অবশ্য বরাবরের মতোই তাঁর দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি। প্রেস ব্রিফিং হলেও সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ দাবি নিয়ে খোদ রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান মিচ ম্যাককনেল গতকাল সকালে টুইট করে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানান।

শান্ত থাকার আহ্বান বাইডেনের
ট্রাম্পের এমন ধুমধাম অভিযোগের পরই সাংবাদিকদের সামনে আসেন বাইডেন। সমর্থক, ভোটার ও নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘শান্ত থাকুন। ভোট গণনা চলছে এবং খুব শিগগির আমরা (ফল) জানতে পারব। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তা খুবই স্বস্তিকর। কোনো সন্দেহ নেই, গণনা শেষে কমলা হ্যারিস (রানিং মেট) ও আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।’

সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের ৪৮
সিনেটে ৪৮ আসনে জয় পেয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিএনএনের এক অনুমানে গতকাল রাতে বলা হয়, রিপাবলিকান পার্টির শক্ত ঘাঁটি অ্যারিজোনার সিনেট আসনে জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট মার্ক কেলি। রিপাবলিকানদের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ৪৭। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৫১টি আসন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ