ডাকসুর পরপরই চাই রাকসু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:
ডাকসু নির্বাচনের হাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের জন্য সরব ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংগঠনের নিবন্ধন, গঠনতন্ত্র ও কার্যকরী কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার পর এখন প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাবি ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা সংলাপ শেষ করেছে। বাকি সংগঠনগুলো এখন বসার অপেক্ষায়। সংগঠনগুলোর দাবি, কালক্ষেপন না করে ডাকসুর পরপরই যেন রাকসু নির্বাচনের আয়োজন করে প্রশাসন।

সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে আগে রাকসু নিয়ে তাদের ভাবনা ও মতামত শুনি। সংলাপ শেষ হলে সেই মোতাবেক আমরা অগ্রসর হবো।’

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কেউই এখন পর্যন্ত রাকসু নিয়ে তাদের ভাবনা জানায়নি। কিন্তু তাদেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, রাকসু নিয়ে সংলাপে আসার জন্য গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দশটি সংগঠন তাদের দলীয় কাগজপত্র জমা দেয়। গত বৃহস্পতিবার রাবি ছাত্র ফেডারেশন প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপে বসে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রাবি ছাত্র মৈত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, ডাকসু নির্বাচনের আগে রাকসু নির্বাচন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তাই ডাকসুর পরপরই প্রশাসন রাকসু নির্বাচন আয়োজন করবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঠিক রেখে মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে রাকসুর বিকল্প নাই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন।

তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন যাই হোক, তার প্রভাব যেন কোনভাবেই রাকসু নির্বাচনকে বন্ধ করতে না পারে সেই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হতেই রাকসু নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যত দ্রুত সম্ভব পরিবেশ পরিষদ গঠন ও ক্যাম্পাসে সকল ক্রিয়াশীল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘রাকসু না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃেত্বর সংকট বাড়ছে। দ্রুত রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তোরণ জরুরি।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন। যা এখনও তৈরি হয়নি। রাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হতে হতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে সেই ফিল্ড তৈরি করতে সক্ষম হবে এবং দ্রুত নির্বাচন দেবে।’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে এখন কাক্সিক্ষত পরিবেশ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ইতিবাচক। এখন আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপে বসবো। যেহেতু রাকসু দীর্ঘদিনের দাবি, আমরাও চাই যেন ডাকসুর পরপরই প্রশাসন রাকসু নির্বাচন আয়োজন করুক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘রাকসু শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। এ বিষয়ে সংলাপ কমিটি কাজ করছে। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই রাকসু নির্বাচন সম্ভব হবে।’

দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে থমকে আছে রাকসুর কার্যক্রম। জানা গেছে, ১৯৬২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৯৮৯-৯০ পর্যন্ত মাত্র চৌদ্দবার রাকসু নির্বাচন হয়েছে।

স/শা