সোমবার , ২০ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ট্রেনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের জরিমানার টাকা যায় কর্মকর্তাদের পকেটে!

Paris
নভেম্বর ২০, ২০২৩ ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ধূমকেতু ট্রেনে অভিযান চালান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার। ওইদিন সেই ধূমকেতুতে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমন করা ১২৮ জন যাত্রীর নিকট ৩৭ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন তিনি। অথচ একই ট্রেনটি রাজশাহী থেকে যখন ঢাকায় যাওয়ার পথে কোনো অভিযান না থাকায় আদায় মাত্র ১০ হাজার টাকার কিছু বেশি।

এর আগে ১৪ নভেম্বর খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস টেনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান মহাব্যবস্থাপক। ওইদিন সেই ট্রেন থেকে ১২ হাজার ৮১০ টাকা ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করেন জিএম। যা চিত্রা ট্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জরিমানাসহ ভাড়া আদায় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তারা আরও জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে অসিম কুমার তালুকদার এ অঞ্চলে জিএম হয়ে আসার পর থেকে অব্যাহতভাবে চলন্ত ট্রেনে নিজেই অভিযান চালান। তিনি সরকারিকাজে রাজশাহী থেকে ট্রেনযোগে ঢাকা, খুলনা বা পঞ্চগড়ে যাতায়াতের পথে এ অভিযান চালান। আর এসব অভিযানে যে অর্থ আদায় হয় তার দুই ভাগের এক ভাগও আদায় হয় না অভিযানের বাইরে অন্য সময়ে। যখন ট্রেনের টিটি, গার্ড বা পরিচালকরা স্বাভাবিক দায়িত্ব থাকেন, তখন চলন্ত ট্রেন থেকে আদায় দেখানো হয় অর্ধেকের কম।

রেলওয়ের বাণিজ্য শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সাধারণ সময়ে ট্রেন থেকে যে টাকা আদায় হয়, তার অধিকাংশ হয় লুটপাট। আবার সরকারি কর্মকর্তা, আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অনেক ট্রেনযাত্রীই টিকিট না কেটে ট্রেন ভ্রমণ করেন। তাদের নিকট থেকে ট্রেনের দায়িত্বরত দৈনিন্দন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জোর করে ভাড়াসহ জরিমানা আদায় করতে পারেন না। যেটি পদের ক্ষমতাবলে করতে পারেন জিএম। এসব কারণে সাধারণ সময়ে ট্রেন থেকে টিকিবিহীন যাত্রীদের নিকট থেকে অর্ধেক টাকাও আদায় করা যায় না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র মতে, জিএম অসিম কুমার তালুকদারে গত ১২ নভেম্বর রাজশাহী থেকে খুলনাগামী কপোতাক্ষ ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ১২১ জন টিকিটবিহীন যাত্রীর নিকট থেকে ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। এটিও ওই ট্রেনে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ জরিমানা আদায়। অথচ সাধারণ অবস্থায় এই ট্রেন থেকে গড়ে ৫-৬ হাজার টাকার ওপর আদায় দেখান দায়িত্বরত টিটিরা।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর রাজশাহী থেকে নিলফামারী জেলার চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ১৬২ জন যাত্রীর নিকট থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করা হয় ২৪ হাজার ৫১৫ টাকা। এটিও আদায় করেন জিএম অসিম কুমার তালুকদার। অথচ এই ট্রেন থেকে কখনোই ৫ হাজার টাকার বেশি জরিমানাসহ ভাড়া আদায় দেখাতে পারেননি টিটিরা। এর আগে গত ২ নভেম্বর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে অভিযান চালিয়ে টিকিটবিহীন ১৫৭ যাত্রীর নিকট থেকে রেকর্ড পরিমাণ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন জিএম। যা এ ট্রেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আদায় বলে নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্য শাখা।

অথচ স্বাভাবিকভাবে এ ট্রেন থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদা দেখানো হয় গড় পড়তায় ১২-১৩ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে অন্তত ৩০-৪০ হাজার টাকা নিচে আদায় হয় না বলেও জানিয়েছেন দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কালের কণ্ঠের একাধিক সরেজমিন অনুসন্ধানেও ট্রেনের টিকিটবিহীন যাত্রীদের নিকট থেকে আদায়কৃত জরিমানাসহ ভাড়া লুটপাটের তথ্য উঠে এসেছে।

ট্রেনের টিকিটবিহীন যাত্রীদের নিকট থেকে জরিমানাসহ ভাড়া লুটপাট সম্পর্কে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল আওয়াল ভুঁইয়া বলেন, ‘সাধারণ সময়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে, সে কারণে ট্রেন ভ্রমনকৃত যাত্রীদের নিকট থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় অর্ধেকরও কম হয়। তবে জিএম স্যার গেলে দ্বিগুন টাকা আদায় হয়।’

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম অসিম কুমার তালুকদার বলেন, ‘সাধারণত ট্রেনে যেসব যাত্রী থাকেন, তার মধ্যে অনেকেই থাকেন সরকারি বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। আমি খেয়াল করে দেখেছি এই সমস্ত যাত্রীদের অনেকেই টিকিট কাটতে চান না। প্রতিটি ট্রেনে অন্তত ২৫-৩০ জন পাওয়া যায় এমন যাত্রী। কিন্তু টিটি বা গার্ডরা এদের নিকট থেকে জরিমানা তো দূরের কথা টিকিটের টাকাও আদায় করতে পারেন না। কিন্তু আমি যখন থাকি, তখন টিকিট কেটেই ছাড়ি তাদেরকে। ফলে টাকা আদায় কম হয় অন্য সময়ে। আর আমি থাকলে বেশি হয়। আবার কিছু টাকা তছনছও হয় আসি না থাকলে। কারণ কাঁচা টাকার প্রতি সবার লোভ আছে। কাঁচা টাকা হাতে পেলে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চান না অনেকেই।’

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর