ট্রাকের নিচে ঘুমিয়ে প্রাণ গেল হেলপারের

বাগমারা প্রতিনিধি:
ট্রাকের নিচে ঘুমিয়ে থেকে সেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে প্রাণ হারালেন এক হেলপার। ড্রাইভার নিজের ট্রাক নিয়ে যখন এগোচ্ছিলেন তখন একটা শব্দে তিনি বুঝতে পারেন চাকার নিচে কিছু একটি পড়েছে। ট্রাক থেকে নেমে এসে দেখেন তারই গাড়ীর হেলপারের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।

ট্রাক চালকের অসচেতনতায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার লামসাম উপজেলার লাকসাম বাজারের একটি আমের আড়ৎতের সামনে। এই ট্রাক চালক ও হেলপার উভয়ের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। নিহত হেলপার রিগেন শাহের(২২) বাড়ি ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সূর্যপাড়া মহল্লায়। সে ওই মহল্লার আবু জেহেরের ছেলে।

শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে নিহত রিগেনের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছালে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ওই রাতেই জানাজা শেষে রিগেনকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। ওই জানাযায় কান্নাজড়িত কন্ঠে রিগেনের পিতা বলেন, তিনি বৃদ্ধ। কাজকাম তেমন করতে পারেননা। একমাত্র রিগেনের আয়ে তাদের সংসার চলত। এখন কী উপায় হবে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, একই উপজেলার কনোপাড়া গ্রামের আমিনুল ড্রাইভারের ট্রাকে গত দুই বছর ধরে রিগেন হেলপারের কাজ করত। দূর্ঘটনার আগের দিন বুধবার আমিনুল ড্রাইভার ও হেলপার রিগেন ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে তাদের ট্রাকে আম লোড করে কুমিল্লার লাকসামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাকটি লাকসাম বাজারের একটি আমের আড়ৎতের সামনে পৌছায়। ওই আড়ৎতেই ট্রাকটির আম আনলোড করার কথা । এ সময় আড়ৎ এ অন্যান্য ট্রাকের অবস্থান ও ভীড় থাকায় ড্রাইভার আমিনুল ট্রাকটি রাস্তার অপর প্রান্তে দাঁড় করায় ও ট্রাক থেকে নেমে যায়। তখন প্রচন্ড গরম ও চোখে ঘুম আসায় হেলপার রিগেন ট্রাকের নিচে চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে ট্রাকের সিরিয়াল পড়লে ড্রাইভার আমিনুল হেলপার রিগেনকে খুঁজে না পেয়ে নিজে ট্রাক নিয়ে আড়ৎতের সামনে যাওয়া শুরু করে।

ট্রাকটি কয়েক হাত এগোতেই একটি শব্দ হলে ড্রাইভার আমিনুল ট্রাক থামিয়ে নিচে এসে দেখতে পান তার হেলপারের রক্তাক্ত দেহ ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়েছে। এ সময় আড়ৎ এর লোকজনেরা এসে এমন দূর্ঘটনা দেখে হতভাগ হয়ে যান। পরে তাদের সহায়তায় অন্য একটি গাড়িতে রিগেনের মৃতদেহ বাগমারায় আনার ব্যবস্থা করা হয়।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নাছিম আহম্মেদ জানান, এই ঘটনায় লাকসাম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, এটি একটি দুর্ঘটনা। এতে কারো অভিযোগ নেই। তাই ড্রাইভার ও রিগেনের পরিবারের মধ্যে বিষয়টি নিস্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রিগেনের পরিবার অত্যন্ত গরীব হওয়ায় পৌরসভা থেকেই তাদের সহযোগিতা করা হবে।
স/শ