টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানো চক্রটি এবারও সক্রিয়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নগরীর মিরপুরের পল্লবী ও রূপনগরে টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানো চক্রটি এবারও সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে। রমজানের শুরুতেই তৎপর এ মৌসুমি চাঁদাবাজরা। ১ রমজান থেকে সংঘবদ্ধ চক্রটি সেহরির সময় টিন বাজিয়ে চলছে।

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহল্লার অলিগলিসহ রাজপথ। বিষয়টি নিয়ে গত বছর যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঘুম ভাঙানো চাঁদাবাজরা টিন বাজানো বন্ধ করে সটকে পড়ে। চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়। সে সময় যুগান্তরের সাহসী পদক্ষেপ মিরপুরব্যাপী প্রশংসিত হয়। এ বছর রমজানের শুরুতে স্থানীয়ভাবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেহরির সময় টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অথচ এ নিয়ম কিছুতেই মানছে না ঘুম ভাঙানো চাঁদাবাজরা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারেই তারা টিন বাজিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাধা থাকায় গত কয়েক বছর সেহরির সময় টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানো নিষেধ ছিল। তারপরও তারা টিন বাজাত ও চাঁদাবাজি করতো। যুগান্তরে খবর প্রকাশের পর এলাকাবাসী স্বস্তিতে ছিল। বর্তমান ডিজিটাল যুগে টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানোরও পক্ষে নন পল্লবী ও রূপনগরের বাসিন্দারা। এ বছর যারা সেহরির সময় টিন বাজিয়ে ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলছে তাদের অগ্রিম দাবিকৃত অর্থ নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন।

২০ রমজানের পর পরই তারা বাসায় বাসায় চাঁদার জন্য হানা দেবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সি ব্লক বাড়ি মালিক কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা রজ্জব বেপারি বলেন, ডিজিটাল যুগে টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানোর দরকার কি? মোবাইলে এলার্ম বা মসজিদের সাইরেনের শব্দে সবার ঘুম ভাঙে। টিনের শব্দ কেউ শুনে না। শুনতে চায়ও না। অযথা মানুষকে বিরক্ত করে কি লাভ? তিনি বলেন, দু’দিন আগে ঘুম ভাঙানো চাঁদাবাজ দলের এক সদস্য ফ্ল্যাটপ্রতি ১০০০ টাকা ধার্য করে দিয়েছে। বলে গেছে, ২০ রমজানের পর পরই টাকা কালেকশনে আসবে। কারও কম দেয়ার সুযোগ নেই। অনেকে হয়তো মান-সম্মানের ভয়ে দাবি করা অর্থ দিয়ে দেবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর ৬ নম্বর বি ব্লক, সি ব্লক, ট ব্লক, দুয়ারিপাড়া ক ব্লক ১নং রোড থেকে ১০নং রোড, খ ব্লক ১নং রোড থেকে ৫নং রোড, দুয়ারিপাড়া পুনর্বাসন, রূপনগর ৩০নং রোড ও মিরপুর ১২ নম্বর ডি ব্লক এলাকায় রাত আড়াইটার পর দলবেঁধে টিন বাজানো শুরু হয়। প্রত্যেক দলে ৪-৫ জন সদস্য থাকে। রূপনগর ও পল্লবীতে টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানো দলে এ রকম শতাধিক সদস্য রয়েছে। এ দলের সদস্যরা জোরে জোরে টিন বাজিয়ে শব্দ করে আর সমস্বরে চিৎকার করে ঘুমন্ত মানুষকে আওয়াজ করে ডাকে- ‘ও ভাই, ও ভাবি উঠুন উঠুন সেহরির সময় হয়েছে। এতে কারও ঘুম ভাঙল কি ভাঙলো না সেদিকে কারও কর্ণপাত নেই। বাজানোর কাজ বাজিয়ে যাচ্ছে। যারা টিন বাজায় তাদের বেশির ভাগ সদস্যই সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেকে আবার মিছিল মিটিংয়ে ভাড়া হিসেবে যায়।

দুয়ারিপাড়া ৪নং রোডের বাসিন্দা আবু সালেহ বলেন, রমজানের ১০ দিন হল মাত্র ১ দিন টিনের আওয়াজ শুনেছি। তাও রাত ২টায়। ওই সময় কি কেউ সেহরি খায়? মোবাইলের এলার্মে সেহরির সময় ঘুম ভাঙে। টিনের আওয়াজ কানে আসে না। টিনের আওয়াজ যেহেতু ১ দিন পেয়েছি চাঁদা তো দিতেই হবে। না দিয়ে উপায় নেই। তিনি বলেন, এ চাঁদাবাজরা বিভিন্ন উপলক্ষ খুঁজে চাঁদাবাজির একটা ক্ষেত্র তৈরি করে। এরা কেউ রোজা রাখে না, নামাজ পড়ে না, টিন বাজায় আর নেশা করে। সারা রাত পর্যন্ত ঘুমায় না। এরা সওয়াবের চিন্তা করলে কি টিন বাজিয়ে টাকা নিত? ঘুম ভাঙানো চাঁদাবাজ দলের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদের সময় তো আর মানুষের কাছে এমনি এমনি টাকা চাইতে পারুম না, তাই লিডাররা কইছে ভোর রাইতে টিন বাজাইতে।

টাকা এমনি এমনি চলে আসবে। এ বছর টিন বাজিয়ে ৬-৭ লাখ টাকা চাঁদা কালেকশন হবে বলে স্বীকার করেছেন এ ঘুম ভাঙানো চাঁদাবাজ। এ ব্যাপারে পল্লবী জোনের এসি এসএম শামীম বলেন, এ বছর টিন বাজিয়ে ঘুম ভাঙানো নিষেধ করা হয়েছে। ডিসি স্যারের এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে। যদি কেউ সেহরির সময় টিন বাজায়, আবার এ নিয়ে চাঁদাবাজিও করে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেব।