এখনও আবেদন করেনি সোয়া দুই লাখ শিক্ষার্থী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রথম দফায় আবেদন নেয়া বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১৩ লাখ ৯৩ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করে। সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আলাদাভাবে আবেদন নেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গড়ে ১ লাখ ২২ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে। দুই ধারায় আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সোয়া ১৫ লাখ। যদিও এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এই হিসাবে সোয়া ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য এখন পর্যন্ত কোথাও আবেদন করেনি।

এদিকে একাদশ শ্রেণীতে এবারও রাজধানীর তিন মিশনারি কলেজ আলাদাভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলো হল- নটর ডেম, সেন্ট যোসেফ এবং হলিক্রস। এর মধ্যে সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিশ্চয়তাকে পুঁজি করে শিক্ষার্থী জিম্মি করার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ২১ মে প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পরদিনই মেধা তালিকায় স্থানপ্রাপ্তদের ভর্তির নির্দেশ দেয়।

২৩ মে প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। অন্যদিকে নটর ডেম কলেজ আগামীকাল (শনিবার) ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবে। ফলে অনেকেই সেন্ট যোসেফ ছেড়ে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হবে। এ অবস্থায় সেন্ট যোসেফে ভর্তি বাবদ জমা দেয়া অর্থের গোটাটাই গচ্চা যাচ্ছে। কেননা একটি টাকাও প্রতিষ্ঠানটি ফেরত দেবে না। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। আবেদন বাবদও সরকারি ফি’র চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ নিয়েছে। সরকারিভাবে একটি কলেজে ভর্তির আবেদন ফি ১২০ টাকা, আর এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়েছে ২৫০ টাকা।

এসব নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা। অসংখ্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি নটর ডেম কলেজে চান্স না হয় এই অনিশ্চয়তা থেকে আমরা সন্তানকে ভর্তি করাচ্ছি। যদি নটর ডেম কলেজের সঙ্গে সমন্বয় করে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হতো, তাহলে কোনো শিক্ষার্থীকে দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হতো না।’

জানা গেছে, গত বছরও একই প্রক্রিয়ায় সেন্ট যোসেফ ছাত্র ভর্তি করে। নটর ডেম কলেজের সঙ্গে সমন্বয় না করে এমনভাবে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার ফলে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী টাকা রেখে চলে গেছে। এই প্রক্রিয়ায় অন্তত ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিজের এক ছেলেকে গত বছর কলেজটিতে ভর্তি করেছিলাম। পরে নটর ডেম কলেজে নিয়ে যাই। কিন্তু সেই টাকা ফেরত পাইনি। এসব বিষয় জেনেও মিশনারি প্রতিষ্ঠানের এভাবে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ বা ভর্তির টাকা ফেরত না দেয়াটা দৃষ্টিকটু ও খুব অন্যায়। মিশনারি কলেজ এ ধরনের কাজ করতে পারে না।’

জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশন বলেন, ভর্তির জন্য ঢাকা বোর্ড আমাদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হচ্ছে। কেননা শতাধিক শিক্ষার্থী চলে যায়। ফলে ভর্তি নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভর্তি হলে কোনো শিক্ষার্থীর ফি ফেরত দিতে পারি না। কেননা, যারা ভর্তি হয় তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে না। জেনেশুনেই ভর্তি হচ্ছে।’ আবেদন ও ভর্তি ফি বেশি নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ভর্তি পরীক্ষা নেই। এর একটা খরচ আছে। আর ভালো শিক্ষক রাখতে হলে বেশি টাকার দরকার। তাই বেশি ফি নিতে হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব কলেজ সরকারি অনুদান (এমপিও) পায় না বা অর্ধেক অনুদান পায়, সেসব প্রতিষ্ঠান বাংলা ভার্সনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার এবং ইংরেজি ভার্সনে ১০ হাজার টাকা ভর্তির সময়ে নিতে পারবে। কিন্তু সেন্ট যোসেফ কলেজ বিভিন্ন বিভাগে নিচ্ছে ১২ হাজার ২শ’ টাকা আর ইংরেজি ভার্সনে ১৩ হাজার ২শ’ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহা. জিয়াউল হক বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেন্ট যোসেফসহ তিনটি কলেজকে আলাদাভাবে ভর্তি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করবে। কিন্তু এছাড়া ভর্তি সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালার অন্য সব ধারা মানতে হবে। ভর্তি ফি সরকার নির্ধারিত হারের বেশি নিতে পারবে না। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে বোর্ড নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই কলেজ সমন্বয় করে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করলে ছাত্রদের সুবিধা হতো। দেশের সিনিয়র নাগরিক হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে সুবিধা দেয়াই কর্তব্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভর্তির মতো এ ধরনের প্রতিযোগিতায় সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে।

সোয়া দুই লাখ আবেদন করেনি : এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। অপরদিকে সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষার ধারায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবেদন করেছে প্রায় সোয়া ১৫ লাখ। সেই সোয়া দুই লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেনি।

এবার সরকারিভাবে সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রমে কলেজ ও মাদ্রাসার জন্য তিনদফা আবেদন নেয়া হচ্ছে। ১২ মে প্রথম দফা আবেদন নেয়া শুরু হয়। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয় অনলাইন এবং এসএমএসে আবেদনের কাজ। এদিন বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩৩ জন আবেদন পড়ে। এসব শিক্ষার্থীর কেউ ৩টি আবার কেউ ১০টি পর্যন্ত কলেজের জন্য আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের মধ্যে ছাত্রী বেশি। ছাত্রী আবেদন করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৩০৩ জন।

উল্লেখ্য, এ বছরও অনলাইনে সর্বনিু ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাচ্ছে। এর বিনিময়ে ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এসএমএসেও একটি করে কলেজে আবেদন যাচ্ছে। এসএমএসে একটি আবেদনের জন্য ১২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। উভয় মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করা যাবে। বৃহস্পতিবার ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত প্রথম দফার আবেদন করা গেছে। এ পর্যায়ে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে ১৯ ও ২০ জুন। ২১ জুনই আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদেরকে নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হতে হবে। ১ জুলাই শুরু হবে ক্লাস।

এদিকে একইসঙ্গে কারিগরি বোর্ডের অধীন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করা যাচ্ছে। ১২ মে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। একটানা ৮ জুন পর্যন্ত আবেদন নেয়া হবে।

কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা দুই শিফটে আবেদন নিচ্ছি। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রথম শিফটে আবেদন করেছে ৭১ লাখ ৮৪ জন। আর দ্বিতীয় শিফটের জন্য আবেদন করেছে ৫১ হাজার ২৯২ জন। ১৫ জুন আবেদনের ফল বা কে কোন প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়েছে সেই ফল প্রকাশ করা হবে।