ঝড়-বৃষ্টিতে নওগাঁয় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:  
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে নওগাঁয় বোরো ধান ও ফসল ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুইদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ার কারণে অধিকাংশ ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে নুইয়ে পড়ায় ধানের শিষগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তবে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ঝড়-বৃষ্টি আর না হলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
সরেজমিনে ঘুরে এবং জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়।  শনিবারও কখনও মুষলধারে আবার কখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়। টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে হালকা ঝড়ো হাওয়াও বয়ে যায়। এতে অধিকাংশ মাঠেই নিচু জমিগুলোতে বোরো ধানের ক্ষেতে পানি জমে গেছে এবং ঝড়ের কারণে বেশিরভাগ ধানগাছ পড়ে গেছে। দ্রুত পানি না সরালে কিংবা পাকা ধান কাটতে না পারলে এসব ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে নওগাঁয় ১ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
শনিবার  দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া ও জগৎসিংহপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বোরো ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেতের ধানগাছ পড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেতে পাকা ধানের শিষগুলোতে ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেতে ধানের শিষ জমে থাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। অনেক কৃষক তাঁদের ফসল বাঁচাতে জমির আইল কেটে পানি বের করেছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলা, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। মান্দা উপজেলার গণেশপুর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন বলেন, দুই দিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় তাঁদের মাঠের অধিকাংশ বোরো ধানের গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ক্ষেতে জমে গেছে পানি। সাধারণত ক্ষেতের ধানগাছ পড়ে গেলে এবং ধানের শিষ পানিতে দুই-তিন তলিয়ে থাকলে ধানের দানাগুলো নষ্ট হয়ে যায় ও ধানের রং নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওই ধানগুলোর বাজারে ব্যবসায়ীরা কিনতে চান না। কিনলেও কম দামে কিনে থাকেন। এছাড়া মাটিতে নুইয়ে পড়া ধান কাটতে শ্রমিক খরচও বেশি পড়ে যায়। ধান খাড়া থাকলে সাধারণত এক বিঘা জমির ধান কাটতে একদিনে পাঁচজন শ্রমিক লাগে, সেই জায়গায় নুইয়ে পড়া ধান কাটতে সাতজন শ্রমিক লাগবে।
জগৎসিংহপুর গ্রামের কৃষক হাফিজার রহমান বলেন, ছয় বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। সব ক্ষেতেই ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারিনি। এখন বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে সব ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পাকা ধানের শিষগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু জমিগুলোর আইল কেটে দেওয়ার পরেও পানি বের হচ্ছে না। দুই-তিন পানি জমে থাকলে ওই সব খেতের ধান পচে যাবে। আবার পানি বের করা গেলেও এই নুইয়ে পড়া ধান কাটতে এখন খরচ বেশি পড়বে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ার কারণে কিছু কিছু বোরো ক্ষেতের ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে এবং খেতে পানি জমে গেছে। তবে এখনও আমরা বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছি না। কারণ এই এলাকার অধিকাংশ মাঠের জমিই উচু। বৃষ্টি থেমে গেলেই কৃষকেরা খেতের আইল কেটে পানি বের করে দেবে এবং দ্রুত ধান কেটে ফেলার চেষ্টা করবে। তবে এ অবস্থায় কৃষি শ্রমিক খরচ বেশি পড়তে পারে।’
টানা বৃষ্টির কারণে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন জেলার মান্দা উপজেলার কৃষকেরা। এই উপজেলার বেশ কিছু বিলাঞ্চল রয়েছে। বৃষ্টির কারণে এসব বিলের অধিকাংশ ধান তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা ধারণা করছেন, বৃষ্টি কমে গেলেও এসব বিলের পানি খুব তাড়াতাড়ি নামবে না। কারণ, অন্যান্য মাঠের উঁচু জমির পানি কেটে দেওয়ায় বিলে গিয়ে ওই সব পানি জমবে।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, মান্দায় বিল এলাকার মাঠগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেতের ধানই কাটা হয়েছে। বিলগুলো থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধানগুলো কিছুটা নষ্ট হতে পারে। এছাড়া উঁচু জমিগুলোতে পানি জমলেও বৃষ্টি থামলেই দ্রুত ওই সব খেতের পানি নেমে যাবে। ফলে ওই সব মাঠে খুব বেশি ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও নিরূপন করা যায়নি। তবে রোববার থেকে টানা রোদ হলে বোরো ধান কিংবা অন্যান্য ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এ ধরণের বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স/শা