জয়পুরহাটে বেড়েছে চালের দাম

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের বিভিন্ন বাজারে এক মাস আগে চালের দাম ছিল (মোটা জাতের) ২৪-২৫ টাকা, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে। সেই সঙ্গে বেড়েছে চিকন জাতের চালের দামও। চালের দাম বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ও সল্প আয়ের মানুষগুলো। বিলম্বে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের কারণে বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি বলে মনে করছেন চাকল মালিকরা।

মাত্র ২০ দিন আগেও জয়পুরহাটে মোটা চাল প্রতি কেজি ২৪ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বি আর ২৮ চাল কেজি প্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৩৯ টাকা হয়েছে। মিনিকেট, কাটারিভোগ, জিরাশাইলেলর মতো চিকন চাল কেজি  প্রতি ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, মোকামের মহাজনদের কাছ থেকে তাঁরাই বেশি দামে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপর নিজেরা কেজি  প্রতি এক থেকে দেড় টাকা লাভ রেখে বিক্রি করছেন।

এদিকে, হঠাৎ করেই চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চালকল মালিকদের কাছ থেকে এবার সরকারিভাবে চাল কেনার বরাদ্দ নির্ধারিত হয় ১২ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন। আর ধানের বরাদ্দ মেলে ১৪ হাজার ৭০ টন। কিন্তু এবার সরকার চালের আগে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের ঘোষণা দেয়।

গত ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে খাদ্য বিভাগ কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শেষ করে। বাজারের তুলনায় সরকারের বেঁধে দেওয়া ধানের দাম বেশি থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযান শেষ হয়। চাল সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণের করা হয় ৪ আগষ্ট থেকে ৩১ আগষ্ট কিন্তু চাল গুদামে আসা শুরু হয় ১৬ আগষ্ট থেকে। চালকল মালিকদের চাহিদার কারণে বাজারে বাড়তে থাকে চাল ও ধানের দাম।

এক মাস আগেও মোটা জাতের ধান বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা মণ দরে। সেই ধান এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা মণ। বর্তমানে মোটা জাতের চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজিতে। আবার সরকারও কিনছে ৩২ টাকা কেজিতে।

ফলে বর্তমান বাজার অনুযায়ী সরকারের কাছে চাল বিক্রি করে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাতাল মালিকরা। চাতাল মালিকদের অভিযোগ, বিলম্বে বরাদ্দ আসায় তারা আগে থেকে ধান কিনতে পারেনি আর সেই ধান এক শ্রেণির মহজন মজুদ করেছে। এখন মিলাররা ধান কিনতে গেলে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে ধান কিনে সরকারি গুদামে চাল দেওয়ায় মিলাররা লোকসান গুনছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগস্টের শুরুতে বরাদ্দ পাওয়া চাল পরিশোধে জেলার ৫০৮ জন চালকল মালিক সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেন। গত ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ৫হাজার টন। চাল সংগ্রহে সরকার বিলম্ব করায় নতুন করে সময় নির্ধারন করেছে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে আরো ৬ হাজার টন।

মিল মালিকরা বলছেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ বরাদ্দের চাল পরিশোধ করতে তাঁদের লোকসান হচ্ছে। সেখানে অতিরিক্ত চালের বরাদ্দ কোনো মালিকের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।

ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ী ইমার হোসেন বলেন, মোটা জাতের চাল কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি দরে। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজিতে। সেই অনুপাতে ধানের দামও মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। ৩২ টাকা চালের দাম যথেষ্ট ছিল কিন্তু ধানের দাম বাড়ায় ওই দামে চাল দিয়ে তাদের লাভ হচ্ছেনা।

কালাই উপজেলার হারুঞ্জা বাজারের বীথি চালকলের মালিক গৌতম চন্দ্র চাকি বলেন, ‘আমার মিলের বিপরীতে সরকারের সঙ্গে ১২ টন চাল বিক্রির জন্য গত ৪ আগস্ট চুক্তি করেছি। বাজার অনুপাতে এই চাল বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে দুই-তিন হাজার টাকা লোকসান হবে।’

কালাই থানা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সাধারণত চাল সংগ্রহের সময়কাল মে থেকে জুন মাসের মধ্যে হয়। কিন্তু এবার সরকার চাল কিনছে আগস্টে। কোনো কৃষকের ঘরে এখন ধান নেই। অসময়ে চাল কেনার কারণে মিল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছে।’

জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা মেনে জেলায় চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে এবার ধান সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে চাল সংগ্রহে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার কারণে বাজারে এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সে কারণে বাজারে ধান-চালের দামও বেড়ে গেছে।’

তবে তিনি আশা করছেন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মিলারা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করবে। এবছর মিলারদের তেমন লাভ হবেনা বলেও জানান তিনি।ইতনি বলেন, বাজারে চাল সংকটের কারনেই এবছর নির্ধারিত সময়ে মিলাররা চাল দিতে পারেনি।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী চালের বাজার ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেন, ‘অসময়ে চাল সংগ্রহের কারণে বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ বরাদ্দ ছাড়াও সরকার সারা দেশে অতিরিক্ত আরো আড়াই লাখ টন চাল কেনার বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমান বাজারে যেখানে মিল মালিকরা লোকসান গুনছে সেখানে অতিরিক্ত বরাদ্দের চাল দিতে গেলে বাজারে চালের দাম আরো বেড়ে যাবে।’

স/আ