জয়পুরহাটে চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড: ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতের চার্জশিট গ্রহন

নিজস্ব প্রতিবেদক,জয়পুরহাট:
জয়পুরহাটের ভাদসা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান একে আজাদ হত্যার ৩ বছর পর সিআইডি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহন করেছে আদালত। রবিবার জয়পুরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক ইকবাল বাহার চৌধুরী এই অফিযোগ পত্র আমলে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনাকারী হাতেম আলীসহ পলাতক ৫ আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার অভিযোগ পত্রে অভিযুক্তরা হলেন- যুবলীগ নেতা মুন্না পারভেজ, সৈকত হোসেন, আঃ হাকিম, সাদ্দাম হোসেন, হাবিব মিয়া, রাজিব হোসেন, শাহিনুর ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, নাজিম, তৌহিদ ইসলাম, সোহাগ হোসেন, ভাদসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জয়পুরহাট জেলা পরিষদের সদস্য হাতেম আলী। এদের মধ্যে হাতেম আলীসহ ৫ আসামী পলাতক রয়েছে।

মামলার অভিযোগ পত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৪ জুন রাত পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান একে আজাদ প্রতিবেশী পবিত্র মন্ডলকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বাড়ির অদূরে গোপালপুর বাজারের কাছে ওঁৎ পেতে থাকা আসামি মুন্না পারভেজ ও তার দল আজাদের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে আহত অবস্থায় আজাদ কে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় নয়ন মন্ডল নামে আরো একজন প্রতিবেশি গুলিবিদ্ধ হয়। মামলার সাক্ষীরা আহতকে উদ্ধার করে পুলিশ ভ্যানে করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুন ভোরে তার মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাই এনামুল হক কাস্মির বাদী হয়ে ৫ জুন ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬-৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন জয়পুরহাট সদর থানার তৎকালিন পরিদর্শক ফরিদ হোসেন। পরে ২০১৭ সালের এপ্রিলে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডিতে বেশ কজন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। সব শেষে ২০১৮ সালের নভেম্বরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান পরিদর্শক জিয়াউর রহমান। তিনি তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের ও জনগণের দেয়া তথ্যমতে, অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পান।

আসামি সোহেল রানা ও মনির হোসেন আগেই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। নিহত দুই আসামীকে মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়।

নিহত চেয়ারম্যানের ছোট ভাই এবং মামলার বাদী এনামুল হক কাস্মির জানান, দীর্ঘদিন পরে হলেও মামলার মুল আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল এবং তা গ্রহন করায় তারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।

মা সাহারা বেগম জানান, তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, অথচ হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই মামলার দ্রুত নিস্পত্তি করে আসামীদের শাস্তি চান তিনি।

নিহতের ছোট ভাই ভাদসা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন সিল্কসিটি নিউজকে জানান, তার ভাই হত্যাকারীর পরিকল্পনাকারী এখনো আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন বাকি ৪জন পলাতক রয়েছেন। যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহন করা হয়েছে এখন তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার কাজ শুরু করা হোক।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, চার্জশিট গ্রহন করার ফলে পলাতক আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে অল্প সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব।