দিল্লির নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোশ পরে হামলা, ৪২ ছাত্র-শিক্ষক জখম

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের বিরোধীতায় সরব দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাতে মুখোশ পরে এ হামলা চালায় একদল যুবক।

এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষসহ ৩০ শিক্ষার্থী ও ১২ শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন।

বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন এ হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, রোববার সন্ধ্যার এক দল মুখোশধারী যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ও ছাত্র সংসদের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাদের হোস্টেল ভাঙচুর করা হয়।

হামলায় রক্তাক্ত হন ছাত্রসংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ। তার রক্তাক্ত ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় শুরু হয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিতে দেখা গেছে, ঐশী ঘোষের মাথা বেয়ে রক্ত ঝরছে। রক্তাক্ত এই ছবি নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন অনেকেই।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, প্রথম দিন থেকেই বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী। এছাড়া হোস্টেল ফি বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আগে থেকেই চলছিল। ফি কমাতে ধর্মঘট ডেকেছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। এ ধর্মঘটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, রোববার ধর্মঘট বানচাল করতে এবিভিপির নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। বিকেলে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ঘটে। সন্ধ্যার পর অর্ধশতাধিক মুশোখধারী ক্যাম্পাসে ঢুকে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হোস্টেলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদকে (এবিভিপি) এ হামলার জন্য দাযী করে ছাত্র সংসদের সহসভাপতি সাকেত মুন এনডিটিভিকে বলেন, এবিভিপির নেতাকর্মীরাই এ হামলা চালিয়েছে। ওই সংগঠনটি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে মুখোশের আড়ালে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

হামলা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগ করে সাকেত মুন বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের মদদে এবিভিপিকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে। তারা যখন ভাঙচুর করছিল তখন নিরাপত্তা রক্ষীরা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে এসব দেখছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অতুল সুদ বলেন, মুখোশধারীদের হাতে লাঠি ও পাথর ছিল। তারা একের পর এক হোস্টেলে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ওদের হাতের পাথরগুলো যে কারো মাথায় সজোরে আঘাত করলে অনেকেরই মাথা ফেটে যেতে পারত।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে এবিভিপির দাবি, ঐশী ঘোষদের বাম ছাত্র সংগঠনগুলোই হোস্টেলে তাণ্ডব চালিয়েছে। হোস্টেলে বাম সংগঠন নেতাকর্মীদের হামলায় তাদের ১১ জন আহত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমার জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাই। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ডাকা হয়েছে। অচিরেই হামলাকারীদের ধরে বিচার করা হবে।

এদিকে আহতদের দেখতে রাতেই হাসপাতালে হাজির হন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এ হামলার জন্য বিজেপি সরকারকে দায়ী করে কঠোর নিন্দা জানান তিনি।

প্রসঙ্গত দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কারণে বিজেপি সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেশ শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের। দিল্লির জামিয়া মিলিয়ার মতোই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এনআরসি ইস্যুতে মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তা নেমেছে।

এর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ করায় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছিল।