জয়পুরহাটে ইটভাটার গরম বাতাসে পুড়ল ৫০ বিঘা জমির ধান

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটে সদর উপজেলায় একটি ইটভাটার গরম বাতাসে প্রায় ৫০ বিঘা জমির ধান পুড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার মেসার্স হারুন এন্ড ব্রাদার্স ব্রিকস ফিল্ড এর গরম বাতাসের তাপে এলাকার বালিয়াতর, থিপুর ও রঘুনাথপুর মাঠে বোরো ক্ষেত পুড়ে যাওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে।

কৃষকদের অভিযোগ,গত তিন বছর থেকে মৌসুমের শেষে ওই ইটভাটার জিগজ্যাগ কিলনের গরম বাতাস প্রচন্ড বেগে চিমনি দিয়ে ছেড়ে দেওয়ায় এর তাপে তাদের ফসল নষ্ট হলেও এর কোন স্থায়ী সমাধান তারা পাচ্ছেন না।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তিন ফসল জমির ওপর ‘এম.এইচ.বি’ ব্র্যান্ডের জিগজ্যাগ আধুনিক ওই ইটভাটাটি নির্মাণ করেন স্থানীয় বিত্তবান হারুনুর রশিদ। সেখানে গত সাত বছর থেকে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

এ সময় এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,ইট পোড়ানো শেষ হওয়ার পর জিগজ্যাগ কিলনে যে গরম বাতাস জড়ো থাকে। রাতের অন্ধকারে ইটভাটার ফায়ারম্যান সেই গরম বাতাস ভাটার চিমনির মাধ্যমে বের করে দেয়। তখন প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত ওই গরম বাতাসের তাপে রঘুনাথপুর, থিপুর ও বালিয়াতর মাঠের প্রায় ৫০ বিঘা জমির ধান সহ বেশ কিছু আম গাছের আম পুড়ে যায়।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, দেড় বিঘা জমিতে তিনি ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানও ভাল হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত ইটভাটার গরম বাতাসে তার পুরো ক্ষেত পুরে গেছে। এতে তার ১২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বালিয়াতর গুচ্ছ গ্রামের আয়মা বেগম জানান, তাঁর ছেলে মিন্টু মিয়া এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন। ধানগুলিতে প্রায় পাক ধরেছে। কয়েকদিন পর কাটার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে মাঠে গিয়ে দেখতে পান তার জমির পুরো ধান অন্যদের মত চিটা হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পূরণ করার মত সামর্থ তাদের নেই।

বালিয়াতর গ্রামের কৃষক কাবিল হোসেন বলেন, এবার তিনি ও তার ভাই তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। ইটভাটার গরম বাতাসে তাদের পুরো ক্ষেত পুড়ে গেছে। আম বিক্রির জন্য ওই এলাকার গ্রামীণ সড়কের ৫০টি সরকারি আমগাছ দরপত্রের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন স্থানীয় শেখপাড়া গ্রামের মতিয়র রহমান। ইটভাটার গরম বাতাসে তার সবগুলি গাছের আম নষ্ট হয়ে গেছে।

বালিয়াতর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, শুধু আম নয় ওই ইটভাটা চালু করার পর থেকে তাদের এলাকার নারিকেল, লিচু, কাঁঠাল সহ কোন ফলই আর তারা ফলাতে পারছেন না। এ ছাড়াও এলাকার প্রায় ১৫ জন কৃষকের অভিযোগ,গত দুই বছর থেকে তাদের ফসল নষ্ট হওয়ার পর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও ক্ষতিগ্রস্থ সব কৃষকদের তা দেওয়া হয়নি। তাই ক্ষতিপূরণ নয়,স্থায়ী সমাধানের দাবি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।


ইটভাটার মালিক হারুনুর রশিদ মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের কাছে ফসলের ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ইটভাটার ফায়ারম্যানের অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ইটভাটার ইট পোড়ানো বন্ধ হওয়ায় ফায়ারম্যান জিড়জ্যাগ কিলনের গরম বাতাস তাড়াহুড়ো করে চিমনির মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় বেশ কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে আগামীতে এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক থাকবেন বলে মন্তব্য করেন।

ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ছাড়পত্রের আবেদন করা আছে’।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো: সেরাজুল ইসলাম সাজু বলেন,‘কৃষকরা অভিযোগ না করলেও ফসল নষ্টের কথা জেনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মাঠ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইতোমধ্যে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন,‘এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া গত বছর একই অভিযোগে তদন্তের পর ওই ইটভাটা বন্ধের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে সুপারিশ পাঠানো হলেও তার কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় অফিস বগুড়া’র সিনিয়র কেমিষ্ট আসাদুর রহমান বলেন,‘২০১৪ সালের পর থেকে ওই ইটাভাটার পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কৃষকের ফসলের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন,এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
স/অ