জেল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করার বিষয় ভেবে দেখবে সরকার

মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ সময় সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে জেল হত্যা মামলায় পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ আছে কি না, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় তা খতিয়ে দেখবে।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, দ্রুত এখানে ফেরত আনা হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, মামলাটি কোন পর্যায় থেকে, হয়ত বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, অথবা আবার মামলাটি কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বা পরবর্তীতে পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান।  তার বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালের জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বুধবার পুলিশ খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনও খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার।

স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী হামজা জাইনুদিন বলেছেন, নিয়ম মেনেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হামজা জাইনুদিন বলেছেন, তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ রয়েছে এবং গ্রেফতারের বিষয়ে তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামান সেই জেলহত্যা মামলার আসামি ছিলেন, তবে পরে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম এলে সে সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।

পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে জামিনে মুক্ত হন খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পরের বছর একটি আদালত জেল হত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়।  কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।

 

সূত্রঃ যুগান্তর