জালিয়াতি চক্রকে গ্রেপ্তারের দাবি ‘প্রক্সি হোতা’র

রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ছিলেন বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়। জালিয়াতি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া প্রক্সিদাতাদের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে তাঁর নাম। তবে ওই সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করলেও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তবে বছর পার না হতেই চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে ‘প্রক্সি’ ঠেকাতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন ‘প্রক্সি হোতা’ নিজেই। সেই সঙ্গে জালিয়াত চক্রকে গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার ছাত্রলীগের প্যাডে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বরাবর ৭ দফা দাবিসহ একটি স্মারকলিপি জমা দেন ছাত্রলীগের এই নেতা। তবে ছাত্রলীগ সভাপতি বলছেন, তাদের অনুমতি না নিয়েই তিনি স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অঙ্গণে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

স্মারকলিপিতে অন্য দাবিগুলো হলো- গত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চিহ্নিত চক্রকে গ্রেপ্তার করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মেস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অস্থায়ী আবাসনের পর্যাপ্ত আয়োজন করা, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত রিকশা-অটোরিকশা ভাড়া ও হোটেলের খাবারের বর্ধিত মূল্য আদায় বন্ধ করা, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা যেন কোন ধরনের র‌্যাগিং ও অশালীন আচরণের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীদের রাত্রিকালীন হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে যেন জটিলতার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, ভর্তি পরীক্ষায় কোন ধরনের অসাধু উপায়, নকল ও প্রক্সি পরীক্ষার মতো অনৈতিক ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিষয়টির পেছনে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা রয়েছে উল্লেখ করে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘গত ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি হয়েছিল। ওই সময় তদন্ত করতে গিয়ে ছাত্রলীগের যে নেতাদের নাম এসেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি এগিয়ে নিতে চায় নাই কারণ সেখানে ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত। এই কাণ্ডের তদন্ত করতে গেলে আরও বড় জায়গা বা তাদের ওপর শ্রেণির নেতারা জড়িত থাকতে পারেন। প্রশাসন হয়তো সেটি ফ্ল্যাশ করতে বা দায়িত্ব নিতে চান নাই। তবে যেই ছাত্রলীগ নেতা প্রক্সিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তিনিই যখন সাংগঠনিক প্যাডে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেন, তখন সেটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় যে, আমি একজন প্রশ্ন ফাঁসকারী বা জালিয়াতিকারী আপনাদের স্মারকলিপি দিয়ে আল্টিমেটাম দিচ্ছি। আপনি এই অনিয়ম বা জালিয়াতি থামান।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফ্রেশ হয়ে এসে বক্তব্য দেবেন বলে চলে যান। পরবর্তীতে একাধিকবার তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ব্যতিত অন্য কেউ সংগঠনের প্যাড ব্যবহার করলে অবশ্যই তাকে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তন্ময় আমার ও সাধারণ সম্পাদকের কোন অনুমতি নেয়নি।’

প্রক্সি কাণ্ডের ‘হোতা’ হিসেবে পরিচিত তন্ময়ের এরকম দাবিকে তিনি ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রক্সির সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে প্রমাণিত হয়েছে পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি যখন এমন দাবি জানায় তখন সেটা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাড়ায়।’

এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘শুধু বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয় আশেপাশের কারো যদি কোন বিষয় নজরে আসে তাহলে সে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে সে তথ্যটুকু দিতে পারে। তবে তার স্মারকলিপি গ্রহণের সময় আমি তাকে বলেছি, তোমরা যে উপদেশগুলো এখন দিচ্ছ, ইতোমধ্যে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সেগুলো হাতে নিয়েছে।’

মূলহোতা হিসেবে তন্ময়ের নাম উঠে আসলেও কেন তার বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগটি নিশ্চিন্তভাবে নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে শাস্তির আওতায় আনা আইন বিরুদ্ধ। তবে গতবার যে নামগুলো পত্র পত্রিকায় এসেছে তারা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। যদি তারা এ ধরনের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে এবার আর কেউ তাদেরকে বাঁচাতে পারবে না।’