জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট: রাজশাহীর সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। তার পরও থেমে যায়নি বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা। বরং বেড়েছে।

সিটি নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা এই সমাবেশ ঘিরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছেন। নগরীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে বেড়েছে তাদের অংশগ্রহণ। সমাবেশ ঘিরে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা প্রতিদিনই সমন্বয় সভা করছেন।

ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সমাবেশের কথা বলা হলেও ফ্রন্টভুক্ত নাগিরক ঐক্য, জাসদ রব ও গণফোরামে স্থানীয়ভাবে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের নাম জানা যায়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর দাবি, রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম তিনটি দল গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাসদের (রব) কমিটি রয়েছে। তবে এই তিনটি দলের নেতাদের নাম বলতে পারেননি তিনি।

বুধবার পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের অনুমতি না মিললেও এদিন বিকেলে গঠন করা হয়েছে স্টিয়ারিং কমিটি। এই কমিটিতে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর নেতারা রয়েছেন বলে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে ২ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশের তারিখ ঘোষণা হলেও মাদ্রাসা মাঠে তাবলিগ জামাতের তিন দিনের ইজতেমার কারণে পিছিয়ে ৬ নভেম্বর সমাবেশ হতে পারে। সে হিসাব করে সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে।

সমাবেশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু যুগান্তরকে বলেন, ‘শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা নয়, ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছে রাজশাহী অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। তারা সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন বলে আশা করছি। সমাবেশ সফল করতে ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন।’

৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। এই সময়ে দু-একটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়া তাদের কাউকে প্রকাশ্যে মাঠেও দেখা যায়নি। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ঘোষণার পর থেকে রাজশাহীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিএনপি নেতারা জেলার বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন। প্রতিদিনই ছোটখাটো মিছিল সমাবেশ ছাড়াও নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে প্রচারমূলক সভা করা হচ্ছে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটিগুলোর উদ্যোগে।

এদিকে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় ২ নভেম্বরের সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। মহানগর পুলিশের (আরএমপি) একটি সূত্র জানায়, ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মাদ্রাসা মাঠে তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী ইজতেমা রয়েছে। ফলে ওই সময়ে সমাবেশের আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে না।

মহানগর বিএনপির এক শীর্ষনেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মাদ্রাসা মাঠে ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই ২ নভেম্বরের পরিবর্তে ৬ নভেম্বর সমাবেশ করার কথা কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। যদি ৬ নভেম্বরও মাদ্রাসা মাঠ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে বরাবরের মতো ভুবনমোহন পার্কে সমাবেশ হবে। এটাই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত।

সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম যুগান্তরকে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের জন্য বিএনপি নেতাদের একটি আবেদন পাওয়া গেছে। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মাদ্রাসা মাঠ কিংবা নির্দিষ্ট অন্য কোনো ভেন্যুতে অনুমতি দেয়া হবে কিনা তা পরে জানানো হবে।

ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত : সমাবেশ উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় ১১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, মহানগর গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল হাসান, নাগরিক ঐক্যের মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মারুফ হাসনাত ও জাসদ রবের জেলা সভাপতি মারুফ আহমেদ টিপু।

কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান মিনু সভা শেষে বলেন, অনুমতি না পাওয়া গেলেও সমাবেশের সব প্রস্তুতি চলছে।