ছেলে-মেয়েরা সারাক্ষণ ফোনে ডুবে থাকে, চিন্তার কোন কারণ নেই বলছে গবেষণা

করোনা আর দীর্ঘ লকডাউনে জীবনযাত্রার ধরনই বদলে গেছে। আর এই পরিস্থিতির শিকার ঘরের ছোটো সদস্যরাও। এই পুরো বছরটাই প্রায় ভার্চুয়াল ক্লাস আর ইনডোর গেমে কেটে গেল তাদের। আর এই সূত্রে টেক-গেজেটসগুলির সঙ্গেও তাদের সখ্যতা বেড়েছে। মোবাইল, ভিডিও গেম বা ল্যাপটপ-ডেস্কটপের স্ক্রিনেই অধিকাংশ সময় কাটছে তাদের। যা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় বাবা-মায়েরা।  তবে এই পরিস্থিতি সহজে বদলে যাবে বলে বলছে এক সমীক্ষা।

ছেলে-মেয়েরা যদি একটু বেশি সময় ফোন বা কম্পিউটারে কাটায়, তা নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। কারণ ছেলে-মেয়েদের এই আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে এটিও বদলে যাবে। সামগ্রিক পরিস্থিতিকে খুবই সহজভাবে সামালানো যাবে। সম্প্রতি এমনই জানাচ্ছে এক সমীক্ষা।

মহামারির সময় তথ্য সংগ্রহ করার পর দেখা যায়, নানা ধরনের টেক গেজেটের ব্যবহার বেড়েছে । বেড়েছে ব্যবহারকারীর সংখ্যাও। স্কুল, কলেজ, টিউশন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সব বন্ধ হওয়ার জেরে আপাতত ভার্চুয়াল দুনিয়াতেই বাড়ির ছেলে-মেয়েদের গোটা একটা বছর কেটেছে। এক্ষেত্রে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের জন্য একটা টাইম লিমিট বেঁধে দেন। অনেকে খুব বকাবকি করেন। ফোন কেড়ে নেন। কিন্তু প্যানডেমিকে শিশু থেকে শুরু করে যুবকদের এই টেক অ্যাডিকশনের মধ্যেও একটা আশার আলো দেখাচ্ছে এই সমীক্ষা। গবেষকদের দাবি, বাবা-মায়েরা যতটা চিন্তায় রয়েছেন বা যতটা গভীরে ভাবছেন, ততটাও খারাপ প্রভাব পড়েনি তাদের ছেলে-মেয়েদের উপর। অধিকাংশক্ষেত্রেই এই ভয় ভিত্তিহীন।

সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের কথায়, কমিক বুক, সাইলেন্ট মুভি থেকে শুরু করে রেডিও টিভি কিংবা এই স্মার্ট ফোন। প্রযুক্তির উদ্ভাবন আর ক্রমবিকাশ প্রতিবারই পুরোনো প্রজন্মের মধ্যে একটা ভীতির সঞ্চার করেছে, যা বাস্তবে ততটাও গুরুতর নয়। প্রতিবারই সবাই মনে করেছে, একটি নির্দিষ্ট টেক ডিভাইজের প্রতি সবাই আকৃষ্ট হচ্ছে। এর জেরে যুবকরা শেষ হয়ে যাবে বা ভুল পথে চলে যাবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব বদলে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে, তবে সময়ের নিরিখে সেই প্রবণতা বদলে গেছে। আজকাল নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রজন্মরা এক ডিভাইজ থেকে অন্য ডিভাইজে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। টিভির বদলে ইউটিউবকে বেছে নিয়েছে। ফোনে কথা বলার বদলে সোশাল মিডিয়া সাইটগুলিতে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই নির্দিষ্ট কোনও ডিভাইজের প্রতি আকর্ষণ স্থায়ী নয়।

সমীক্ষা জুড়ে দেখানো হয়েছে, কিভাবে মার্কিন যুবকদের উপর প্রভাব ফেলেছে মোবাইল ইন্টারনেটের রমরমা। এক্ষেত্রে ১৮-৩০ বছরের যুবকদের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। প্রায় ১,২০০ জনের সার্ভে ডাটার উপর চলেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা । অ্যাডভান্স ইন লাইফ কোর্স রিসার্সে সমীক্ষার লেখক ও  ইনস্টিটিউট অফ বিহেভিয়ারল সায়েন্সের সোসিওলজির অধ্যাপক স্টিফ্যানি মলবর্নও একই কথা জানিয়েছেন। তার কথায়, প্রযুক্তির উদ্ভাবনের পাশাপাশি প্রযুক্তির স্বাদ পরিবর্তনও জারি রয়েছে। তাই বাবা-মায়েদের অধিক চিন্তা করে কোনও লাভ নেই। কারণ কোন কিছুর প্রতিই গুরুতরভাবে আকৃষ্ট হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই। এই অ্যাডিকশন বা বিশেষ টেকনোলজির প্রতি আকর্ষণও একসময় বদলে যাবে। আর এদিক থেকেই বাবা-মায়েদের স্বস্তি দিতে পারে পুরো বিষয়টি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ