ছেলে নৌকার প্রার্থী, বাবা বিদ্রোহী

আসন্ন পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বাবা ও ছেলে।

বাবা আব্দুল হাকিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি এবার নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। আর ছেলে আবু হোসেন পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। তিনি এবার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন। একই ইউনিয়নে বাবা ও ছেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই তুমুল আলোচনার ঝড় উঠেছে।

মঙ্গলবার বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন পাংশা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আ. আলীম।

জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি পাংশার ১০ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে যশাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ছেলে আবু হোসেন। তিনি এবার নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন।

অন্যদিকে আবু হোসেনের বাবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম নৌকার মনোনয়ন না পাওয়াতে তিনি এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

গত রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাচাই বাছাইতে বাবা ও ছেলে উভয়ের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ডা. প্রভাষ সেন।

স্থানীয়রা জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি দীর্ঘদিন যশাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি ওই ইউনিয়নের একাধিকবার চেয়ারম্যান ও ছিলেন।

এবার নির্বাচনে দল থেকে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে তার ছেলে আবু হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এবার নির্বাচনে লড়ছেন।

এ বিষয়ে যশাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, বাবা ও ছেলের  নির্বাচনের লড়াইয়ে আমরা সাধারণ আওয়ামী লীগকর্মীরা রয়েছি মহাবিপদে। বাবাও আ.লীগের কর্মী, ছেলেও আওয়ামী লীগের কর্মী। বাবার পক্ষে গেলে ছেলের বকাঝকা শুনতে হয়, আর ছেলের পক্ষে গেলে বাবার বকাঝকা শুনতে হয়। পিতা ও পুত্রের লড়াইয়ের কারণে দেখা গেল তারা দুজনের একজনও জিততে পারল না। এতে করে ওই ইউনিয়নে নৌকারই ক্ষতি হবে বলে জানান তারা।

বর্তমান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী হাজী আব্দুল হাকিমকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার পিতা ও পুত্রের নির্বাচনি লড়াইয়ের কারণে হয়তো তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী বাবা আব্দুল হাকিম বলেন, আমি এ ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ছিলাম। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছি। এলাকায় আমার ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে, সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে রয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারকালে আমাকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ডা. প্রভাষ সেন জানান, যশাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে পিতাপুত্র দুজনেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করে দুজনের মনোনয়ন পত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন। বাবা ও ছেলের নির্বাচনে একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, নাকি তাদের যে কোনো একজন প্রত্যাহার করে নেবেন সেটি আগামী ১৯ ডিসেম্বর দেখার জন্য আমাদের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবু হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমার বাবাও এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিও আসন্ন নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। তিনি তার মতো করে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে তাকে কোনো হয়রানি বা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে না বলে জানান।

উল্লেখ্য, পাংশা উপজেলার ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ১০ জন, জাসদের দুজন, জাকের পার্টির একজন ও স্বতন্ত্র ৪৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১১৬ জন ও সাধারণ আসনে ৩৬৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করে তারা সবাই বৈধ প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি।

 

সূত্রঃ যুগান্তর